পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পরিবারকে মানসম্মত আবাসিক সুবিধা দিতে সারা দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় ৩ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৪৯৫ বর্গফুটের এসব ফ্ল্যাটের প্রস্তাবিত যে দাম ধরা হয়েছে, বর্তমান বাজারে সেই দামে অভিজাত এলাকা ছাড়া ঢাকার বেশির ভাগ এলাকাতেই ফ্ল্যাট মেলে।
এ বিষয়ে একটি প্রকল্প মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের পৌরসভা এলাকায় ৩ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি ফ্ল্যাটের প্রস্তাবিত নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বেশি। এতে প্রতি বর্গফুটের দাম পড়বে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ ঢাকা শহরের মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরার কিছু কিছু এলাকায় প্রতি বর্গফুট এর চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়।
আর রাজউকের নির্মিত অভিজাত ফ্ল্যাটগুলোর প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয় ৪ হাজার ৮০০ টাকা। উত্তরায় রাজউকের এসব ফ্ল্যাটের অধীনে রয়েছে পার্ক, হাঁটা, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা; রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার ও খেলাধুলার ব্যবস্থা।
দেশের জেলা শহরগুলোতে ফ্ল্যাটের দাম আরও কম। নিউজবাংলার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ময়মনসিংহে বিভাগীয় শহর ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ৩১০০-৩২০০ টাকা এবং কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা শহরে ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা।
শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশের আটটি বিভাগের ৫৯টি জেলার ৬৬টি উপজেলার ৬৬টি পৌরসভায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সমাজের অপরিহার্য অংশ। ফ্ল্যাটের জন্য এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হবে না। তবে ফ্ল্যাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হিসেবে সামান্য কিছু টাকা নেয়া হবে।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দুটি ভবন ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে উপজেলা পর্যায়েও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণের গুরুত্ব দেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পরপর প্রধান নগরগুলোতে বাসিন্দার সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৫ লাখ। অথচ ২০১১ সালেই সেই জনসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ। বর্তমানে শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান, এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছেছে।
এই বিপুল জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই বাস করে পৌর এলাকায়, যেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজের ভারও থাকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ওপর। পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসনের কোনো ব্যবস্থা না করায় তারা শহরের বিচ্ছিন্ন স্থানে অস্থায়ী শেডে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন।