ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ‘গণরুম’-এর দায় প্রশাসনকে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসনের নিশ্চয়তা দিতে না পারার কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে, এর দায় ছাত্রলীগের নয়।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হল খুলে দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলছেন, বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হলে জায়গা দিতে ছাত্রলীগের কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণরুম তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এসেছে এ ধরনের অভিযোগ। তবে তা একেবারেই মানতে রাজি নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটি হাস্যকর অভিযোগ। গণরুম সমস্যা প্রশাসনিক সমস্যা। প্রশাসনের মাধ্যমেই এটির সৃষ্টি। প্রশাসন যখন শিক্ষার্থীদের আবাসনের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না তখনই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো রুমকে বরাদ্দ দিয়ে সেখানে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীকে রাখার সক্ষমতা ছাত্রসংগঠনের নেই। আবাসন সমস্যা সমাধানে আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি। সামনেও ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, হলগুলোতে আর গণরুম থাকবে না। এ জন্য বিভিন্ন হলের ‘গণরুম’-এর চরিত্র পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান সাদ্দাম। তার দাবি, ছাত্রলীগের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাদ্দাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণরুম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত করার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিতে অনেক নেতিবাচক উপাদান যোগ করে। আমরা সব সময়ই চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হোক। প্রথম দিন এসেই যেন প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের জন্য সিট পায় সেটি আমরা চেয়েছি। এ জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ডাকসুতে ছাত্রলীগের ইশতেহারেও এটি ছিল।’
তবে প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কাও করছেন সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষে যেহেতু অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, সেহেতু তাদের আবাসনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। ঢাকায় এসে মেস ভাড়া করে থাকবে তেমন সামর্থ্য অনেক শিক্ষার্থীর নেই। আর ইতিমধ্যে যেসব শিক্ষার্থী গণরুমে ছিল তাদেরও আবাসনের নিশ্চয়তা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হবে। তা না হলে তাদের ব্যাপারে আমরা দায়দায়িত্বহীন থাকব। এটি বাস্তবায়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের আবাসিক হল এবং বিজয় একাত্তর হল ছাড়া বাকি সব আবাসিক হলেই ছাত্রলীগ সিট বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন নীতিমালা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মেনে নেবেন কি না, এমন প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ সব সময়ই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা প্রশাসনিক যে বাতাবরণ সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। ১৯৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭১ সাল ছাড়াও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ আন্দোলন করেছে। এসব আন্দোলন সফল করার জন্য তো সে সময় কৃত্রিম আবাসিকসংকট তৈরি করে ছাত্রলীগের গণরুম সৃষ্টির প্রয়োজন হয়নি।
‘মূলত ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি আত্মিক বন্ধন রয়েছে। ছাত্রলীগ তার রাজনীতির জন্য কখনও কোনো অপরাজনৈতিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল নয়।’
আবাসিক হলে সিট বণ্টনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেলে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও হলে উঠবেন। এ বিষয়ে আপত্তি নেই সাদ্দাম হোসেনের।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এখানে কোন রাজনৈতিক সংগঠনকে নির্বিশেষে সিট প্রদান করা হবে সেটি মূল বিবেচ্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, যাদের সিট খুব প্রয়োজন সেসব শিক্ষার্থীকেই যেন সিট বরাদ্দ দেয়া হয়।’