গণটিকা প্রয়োগের দ্বিতীয় ডোজেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ কেউ কাকডাকা ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা পেয়েছেন বেলা ১১টার দিকে। অভিযোগ, বুথসংখ্যা কম হওয়ায় এমন ভোগান্তি।
ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের আওতায় যারা আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়।
রাজধানীর রামপুরার একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা লাইন। নারীদের লাইনে ভিড় না থাকলেও পুরুষদের লাইন ছিল লম্বা। লাইনে দাঁড়ানো মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মেজাজও হারাচ্ছেন কেউ কেউ।
টিকা নিতে একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের লাইনে পঞ্চাশোর্ধ্ব মোস্তফা কামাল দাঁড়ান ভোর ৪টায়। সাত ঘণ্টা পর বেলা ১১টায় পান টিকা।
টিকা দিয়ে বের হওয়ার সময় তিনি বলছিলেন, ‘ভোর ৪টায় আসছি। লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম এতক্ষণ। মাত্র টিকা পেলাম। পায়ে ঝিমঝিম ধরে গেছিল।’
টিকা পেলেও মোস্তফার অভিব্যক্তিতে বিরক্তি আর ক্ষোভ ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘দেশটা কোনো দিন ঠিক হবে না। এতক্ষণ কখনও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যায় রোদের মধ্যে।’
সকাল ৭টা থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ডালিম মিয়া বলেন, ‘দুইডা বুথ দিছে। মাইয়াগো বুথে তো মানুষ কম। এইডাতে অনেক ভিড়। আর একটা বুথ দিলে কষ্ট পাইতাম না। বয়স হয়ে গেছে। এহন কী এতক্ষণ লাইনে দাঁড়াবার পারি।’
এই কেন্দ্রে মঙ্গলবার যাদের টিকা দেয়ার কথা ছিল, তাদের তারিখ পরিবর্তন করাতে শুরুতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। যাদের টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার তারিখ ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর উল্লেখ রয়েছে, তাদের পাশাপাশি উপস্থিত হন যাদের কার্ডে ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ রয়েছে তারাও।
ফলে দিনের শুরু থেকেই একরামুন্নেছায় ছিল মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। পরে জানানো হয়, যাদের কার্ডে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার তারিখ ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর উল্লেখ রয়েছে, তাদের টিকা দেয়া হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর।
কেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, আগে টিকা নিতে হবে এমন চিন্তা থেকেই সকালেই লাইনে দাঁড়ান সবাই। তবে ভেতরে স্বাভাবিকভাবেই টিকা দেয়া হচ্ছে।
একরামুন্নেছা বিদ্যালয়ের আলাদা দুটি কক্ষে টিকা কার্যক্রম চলছে। দুই জন ভ্যাকসিনেশন কর্মী টিকা দিচ্ছেন। টিকা দিতে সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ড সময় লাগচ্ছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নারী ও বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি অনেকেই জানেন না বিধায় লাইনের শেষ মাথাতেও বয়স্ক লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
টিকা নিতে বেলা ১১টায় এসে লাইনে দাঁড়ান মো. আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি মাত্রই আসলাম। তবে জানি টিকা নিতে ২টা বেজে যাবে। একজন দিয়ে এত মানুষের টিকা দেয়া কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। এটা পরিবর্তন করা উচিত।’