জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জলবায়ু অর্থায়ন, জলবায়ু অভিবাসীদের পুনর্বাসন এবং সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য অন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের রটারডামে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন (জিসিএ) বৈঠকের পাশাপাশি পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আইএমএফ প্রধান ও ডাচ মন্ত্রীদের সঙ্গে করা বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের এই অবস্থান তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মোমেন ডাচ অবকাঠামো ও পানি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বারবারা ভিসারের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সহায়তা চান।
তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাঁধের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেন।
তিনি এ ব্যাপারে বাঁধ ও ডাইক নির্মাণে ডাচদের পরামর্শ ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন।
মোমেন বলেন, ডাচ সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) পানি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।
নেদারল্যান্ডসের মন্ত্রী বারবারা ভিসার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর জন্য অব্যাহত ডাচ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করারও অঙ্গীকার করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী টম ডি ব্রুইজনের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বৈঠকে তিনি ডাচ পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, এলডিসি গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশনের পর কিছু সময়ের জন্য ডাচ বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাচ মন্ত্রীকে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য সামগ্রী সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় তিনি পরামর্শ দেন, ডাচ আমদানিকারকরা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং আইসিটি পরিষেবাসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা নিতে পারেন।
মন্ত্রী ডি ব্রুইজনকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ডাচ উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে আরেকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইএমএফের সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
মোমেন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, বন্যা এবং খরাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জনগণ যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা ব্যাখ্যা করেন।
তিনি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বৈশ্বিক নেতা।
মোমেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি প্রকল্পগুলোকে অর্থায়নের জন্য আইএমএফের সহায়তা চান।
মিসেস জর্জিয়েভা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি মিয়ানমারে নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।
মিসেস জর্জিয়েভা আশ্বস্ত করেন, তার অফিস জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এখন নেদারল্যান্ডসে আছেন গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের সভায় যোগ দিতে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের জন্য জ্ঞান এবং সর্বোত্তম অনুশীলন বিকাশ ও শেয়ার করার জন্য এটি একটি ডাচ উদ্যোগ।
মোমেন জিসিএর বোর্ড সদস্য, আর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন সংগঠনের চেয়ারম্যান।
বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান অফিস জিসিএ সদর দপ্তরের ভাসমান কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার বোর্ড সদস্য, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করেন।
জিসিএর বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রধান দূষণকারী দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষত প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জলবায়ু অভিবাসীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব।
মোমেন প্রতি বছর কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সোমবার সকালে মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিতভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্ল্যাটফর্ম জলবায়ু দুর্বল ফোরামের (সিভিএফ) মন্ত্রীদের একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন।