‘অনেক দিন থাকি ক্লাস হয় নাই, স্কুলত যাবার পাই নাই। বন্যা হয়া অ্যালা স্কুল পানিত ডুবি আছে। ক্যাং করি ফির ক্লাস শুরু হইবে? দেড় বছর বাড়িত থাকিয়া ভালোমতো বই পড়া হইল না।’
কথাগুলো নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের টাবুরচর এলাকার আল আমিনের।
১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ চালুর ঘোষণা শুনে নিজের স্কুলে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সে।
টেপাখড়িবাড়ী ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আল আমিন নিউজবাংলাকে বলে, ‘স্কুলের চাইরো পেকে পানি। বাড়ি থাকি ব্যারে আসিলে পানিত নামির নাগে, আর স্কুলত ঢুকির গেইলেও পানিত নামি ঢুকির নাগে।’
একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জাকির হোসেন বলে, ‘স্কুলের মাঠোত বড় বড় খাইল (গর্ত) হইছে। অনেক পানি জমিছে। কাহো পড়ি গেইলে খবর খারাপ হয়া যাইবে। স্কুলটাক ভালো করা দরকার।’
টাবুরচর এলাকায় ২০০৯ সালে স্থাপিত স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭০ জন। স্কুলের নিচে তিস্তার পানি। স্কুলে ঢোকার রাস্তা, মাঠ সবই এখন পানির নিচে। স্কুল খুললে এই পানির মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ২০১৬ সালের বন্যার পর ওই এলাকায় বড় বড় খানাখন্দক আর নালা তৈরি হয়। এতে সারা বছর পানি জমে থাকে।
তার ওপর চলতি বছরের বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাঁচ দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্কুলের নিচে থইথই করছে পানি। দোতলা স্কুল ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ধরেছে ফাটল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, স্কুলটি ধসে পড়ার।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, এখন আর বোঝা যায় না এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এখানে আবার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবে। এই পানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুসা মিয়া জানান, বিদ্যালয়টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পুরো এলাকায় মাটি ফেলে খানাখন্দগুলো পূরণ করে ভবনটি সংস্কার করতে হবে। পড়াশোনার জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন তা এখানে আর নেই। এই অবস্থায় কেউই তার সন্তানকে এখানে পাঠাতে চাইবে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম বলেন, ‘এখন আমরা পানিবন্দি। বন্যা রাস্তাঘাট, স্কুলের মাঠ সব খেয়ে ফেলেছে। বিল্ডিংয়ের যে অবস্থা তাতে দোতলায় উঠতে ভয় লাগে। কখন না জানি ভেঙে পড়ে।
‘এই পরিস্থিতিতে স্কুলের পাশের একটি জায়গায় টিনশেড দিয়ে ক্লাস শুরুর জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ময়নুল হক নিউজবাংলাকে জানান, এই এলাকায় আটটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। ২০১৬ সালের বন্যায় সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবকাঠামো, জমি-জায়গা, বিদ্যালয়ের মাঠ, চলাচলের রাস্তা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।
টেপাখড়িবাড়ী ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। এটি সংস্কারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
ডিমলা উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে নিলামে দেয়ার ও বিদ্যালয়ের মাঠ জাগিয়ে তোলার জন্য মাটি ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
‘সরকারিভাবে বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। নাহলে স্থানীয়ভাবেও সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
স্কুলটির সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন।