বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যাদের জীবনে কলেজ আসেনি

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:০২

গত দেড় বছরে একদিনও কলেজ জীবন আসেনি ২০২০ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসএসসির পর শিক্ষার্থীদের একটা ট্রানজিশন হয়। সেখানে অনেকগুলো অনুভূতি ও উপলব্ধি থাকে। কিন্তু এবার ক্যাম্পাসে না আসায় শিক্ষার্থীদের তা ফাঁকা থাকবে।

স্কুলের গণ্ডি পেরোলে হাতছানি দিয়ে ডাকে কলেজের জীবন। স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখানে দুটি বছরের এই মধ্যবর্তী বিদ্যায়তনিক অভিজ্ঞতা শিক্ষাজীবনে একটি রোমাঞ্চকর অধ্যায় হয়ে থাকে, যেখানে স্কুলের কড়া শাসন একটু শিথিল হয়ে আসে।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় বা কলেজ জীবনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের জীবনের নতুন পথ চলা। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার বড় ক্ষেত্র এই সময়টুকু।

এবার করোনা মহামারি কেড়ে নিয়েছে কলেজ জীবন। টানা ১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০১৯ সালের এসএসসি উত্তীর্ণরা কলেজের স্বাদ কিছুটা পেলেও, এখনও একদিনও কলেজ জীবন আসেনি ২০২০ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের।

মহামারি কলেজ জীবনকে বন্দি করে দিয়েছে ল্যাপটপ আর মোবাইলের পর্দায়। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরে বসেই কলেজে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। বন্ধুদের সঙ্গে বাঁধনহারা আড্ডা তো দূরের কথা, শ্রেণিকক্ষে বসারই সুযোগ পাননি তারা।

কলেজ জীবন বঞ্চিতদের তাই আক্ষেপের শেষ নেই।

টাঙ্গাইলের লাউহাটির আরফান খান ডিগ্রি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষায় ভর্তি হয়েছিলেন পার্থ সরকার।

কলেজ যেতে না পারার আক্ষেপ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, ‘করোনা কলেজ লাইফটাই শেষ করে দিল। মাঝে মাঝে নিজেকে তো স্টুডেন্টই মনে হয় না। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন মনে হতো কলেজে উঠলেই একটা অন্য রকম ব্যাপার হবে। কিন্তু তা আর হলো কই?’

এই যে কষ্ট, সেটা আজীবন তার মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছেন সদ্য কৈশোর পেরোনো এই তরুণ।

পার্থ বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি, ঠিকমতো কলেজের সহপাঠী, শিক্ষকদেরও চিনি না।’

ঢাকার হোলিক্রস কলেজে ভর্তি হওয়া তাবাসুম জাহানের গল্পটাও ভিন্ন কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেজ জীবন মানে হলো অনলাইনে বসে থাকা। এর চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই।’

দাপ্তরিক কাজে মাত্র কয়েকদিন কলেজে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। কিন্তু তাতে কি আর মন ভরে? তাবাসসুম বলেন, ‘এ সময়ে কোনো নতুন বান্ধবী কিংবা শিক্ষকের সঙ্গে ভালো করে পরিচয়ও হয়নি। এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই।’

ক্লাসে যেতে না পারায় হতাশাটা পেয়ে বসেছে বিএএফ শাহীন কলেজের ছাত্র দিহান মারছিকে। তিনি বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকায় খুবই হতাশ লাগে। দীর্ঘদিন স্কুলের গণ্ডির মধ্যে ছিলাম। ভেবেছিলাম কলেজে উঠে নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, পরিচয় হবে। কিন্তু সে সুযোগ তো পেলাম না। কলেজ বন্ধ থাকায় এ অনুভূতিগুলো পূরণ হলো না।’

অনলাইন ক্লাসে খুবই অস্বস্তি লাগে দিহানের। ‘সরাসরি ক্লাস করার যে আনন্দ, সেটা অনলাইনে কখনোই পূরণ হয় না’ বলেও জানালেন তিনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা শুনতেই দিহানের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। হতাশা ঝেড়ে ফেলে তিনি অধীর হয়ে আছেন কলেজ ক্যাম্পাসে যেতে।

কলেজ জীবন শিক্ষার্থীদের মনে অন্যরকম দাগ কাটে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষাঙ্গণে প্রবেশের আগে কলেজজীবনে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শেখে। দায়িত্ববোধ, অধিকার ও পারস্পরিক সম্পর্ক – এ বিষয়গুলো তারা শিখতে পারে কলেজজীবনে। কিন্তু করোনা মহামারি কলেজ জীবনের এই শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করল।’

শিক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দিয়েছে, তাই যেটুকু সময় পাওয়া যায়, সে সময়টুকু সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।’

দীর্ঘ সময় কলেজে ক্লাস করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা আসাকে ‘স্বাভাবিক’ বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক। হতাশা কাটাতে শিক্ষক, অভিভাবকদের যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদেরকে বর্তমান বাস্তবতা বুঝিয়ে বলতে হবে এবং তারা যেন পড়াটা আনন্দের সঙ্গে করে সে বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

কলেজজীবনে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রিন্সিপাল ব্রাদার লিও পেরেরা।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে পাঠ্যসূচি অনুযায়ী জ্ঞানার্জন করি, কিন্তু মানুষের জীবনে আরেকটা ভিন্ন দিক আছে, যেটাকে সামাজিক, আবেগিক, মানসিক ও শারীরিক দক্ষতা বলা যায়। এই বিষয়গুলো ক্লাসরুমে পাওয়া যায় না। এগুলো পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা প্রয়োজন। কিন্তু করোনার কারণে কলেজ শিক্ষার্থীরা তা পায়নি।’

এসএসসির পর শিক্ষার্থীদের একটা ট্রানজিশন হয় বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘সেখানে অনেকগুলো অনুভূতি ও উপলব্ধি থাকে। কিন্তু এবার ক্যাম্পাসে না আসায় শিক্ষার্থীদের তা ফাঁকা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এটা মেকাপ করা একটু কঠিন। কারণ ওখানে শিক্ষার্থীদের মিশ্র গ্রুপ থাকে। ক্যাম্পাসে না আসার ফলে এ বিষয়গুলো মানিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

তবে বাস্তবতা মেনে নেয়ার পরামর্শ রেখেছেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখনকার শিক্ষার্থীরা ডিভাইসনির্ভর। কিছু সময় এটা বাদ দিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। এতে জীবনযাপনে ভিন্নতা আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর