মাদারীপুর জেলায় নবগঠিত ডাসার উপজেলা সদর দপ্তর নির্ধারণ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
নবগ্রাম ও বাকাই মৌজায় উপজেলার প্রশাসনিক সব অবকাঠামো নির্মাণ ও জনবল নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গেজেট অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে ডাসার উপজেলা সদর দপ্তরের অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশাসনিক নিয়োগ দেয়ার দাবি করেন ডাসার উপজেলা ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ এর বিরোধীতা করছেন। মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবাহান গোপল এ বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন বলে তারা দাবি করেছেন।
পক্ষে-বিপক্ষে জনসমর্থন তৈরির চেষ্টায় সভা-সেমিনার, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে উভয় পক্ষ।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২৬ জুলাই কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম, ডাসার, কাজীবাকাই, নবগ্রাম ও গোপালপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় ডাসার উপজেলা। ৫টি ইউনিয়নের ৮৭ মৌজা নিয়ে গঠিত ডাসার উপজেলার আয়তন ৭৬ দশমিক ৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৭১ হাজার ৪৯৪ জন।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে নির্ধারিত স্থানে ডাসার সদর দপ্তরের অবকাঠামো দ্রুত নির্মাণের দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজাদ মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদুল হাসান দোদুল, আবুল কাসেম হাওলাদার, বিদ্যুৎ কান্তি বাড়ৈ ও খায়রুল ইসলাম মোহসীন।
সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে নেমেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছে। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ গেজেটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, ‘গেজেট অনুযায়ী ডাসার উপজেলার হেড কোয়ার্টার হবে। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করছেন। তারা কখনোই আওয়ামী লীগের হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগ সরকারি প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন করে এবং সে অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণের জোর দাবি করে।’
প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ডাসারে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপিত করা হয়। পরে ডাসার থানাকে উপজেলায় রূপান্তরের পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর নিকার বৈঠকে ডাসার থানাকে উপজেলায় উন্নিতকরণ করার কথা থাকলেও অনুমোদন হয়নি। চলতি বছরের ২৬ জুলাই ডাসার উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেয় প্রশাসনিক পুর্ণবিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)।
২৯ জুলাই নবগ্রাম ও বাকাই মৌজায় ডাসার উপজলার প্রশাসনিক সব অবকাঠামো নির্মাণ ও জনবল নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।সকালে সংবাদ সম্মেলনে ডাসার আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, নবগঠিত ডাসার উপজেলা হেড কোয়ার্টার নির্মাণের এ প্রজ্ঞাপনের বিরোধীতা করছেন মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবাহান গোপলের সমর্থকরা।
তারা নির্ধারিত নবগ্রাম ও বাকাই মৌজায় প্রশাসনিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং জনবল নিয়োগের বিপক্ষে মানববন্ধন করেছেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক।গেজেটের বিপক্ষে কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘গেজেটে যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ স্থানটি উপজেলার একেবারে কোনায় পড়েছে। আমরা মধ্যবর্তী স্থানে উপজেলা হেড কোয়ার্টার করার দাবি করছি। এমপি আব্দুস সোহাবান গোপাল আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘গেজেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি কোনো নির্দেশনা পুনরায় আসে, সেক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে। আপাতত এর বাহিরে কিছু বলা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ডাসার উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে।’