রাজস্ব, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই বিএনপির ‘গাত্রদাহ’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এক ভার্চুয়াল আলোচনায় রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিএনপির অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের হাত ধরেই হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাইফুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমি উপহার দিয়েছিলেন। ওই সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল, বিমা সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল এবং শেয়ার মার্কেটে ডিসিপ্লিন ছিল।’
বিএনপির এসব দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়াই বিএনপির গাত্রদাহ। তারা দেশকে পরনির্ভরশীল ও নতজানু দেখতে চায়, তাবেদার হয়ে থাকতে চায়। তারা যেটি ছিল।’
বিপরীতে আওয়ামী লীগ দেশকে একটি মর্যাদাশীল এবং সমৃদ্ধ অবস্থানে উন্নীত করতে চায় বলে জানান তিনি।
বিএনপির মুখে দুর্নীতি বিরোধী কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘বিএনপি নেতারা দুর্নীতির কথা বলেন, অথচ তাদের শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সময়কাল। সে সময় ছিলো দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য এবং যে কারণে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আজ মুখরোচক কত কথাই বলেন, অথচ তাদের সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারেক রহমানের পাচারকৃত টাকা আটক করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।
‘ভাঙা স্যুটকেসের গল্প ততদিনে চাপা পড়ে লঞ্চ, টেক্সটাইল মিল, বিদেশে বাড়ি আর ব্যাংক ব্যালেন্সের নিচে। অথচ তারাই আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন! দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকার তাঁর কঠোর অবস্থান ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগে দলীয় কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির ফখরুল সাহেবরা দেখাতে পারবেন কী?’
বিএনপির শাসনামলে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির সফল বাস্তবায়ন’ হয়েছে বলে দলটির নেতাদের দাবি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘এটা আদৌ সত্য নয়, তাদের এ দাবি অন্যান্য বক্তব্যের মতই অসত্য ও অন্তঃসারশূন্য।
‘বিএনপির শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ছিলো চরম স্থবিরতা। বাজেট ছিল পরনির্ভর, বাস্তবায়নে ছিল না সক্ষমতা। তাদের উন্নয়ন নীতি ও কৌশল ছিলো ভ্রান্ত এবং গনবিরোধী।’
উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে বিএনপি ধ্বংস করেছিল জানিয়ে কাদের বলেন, ‘দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লোডশেডিং ছিলো বিএনপির তথাকথিত উন্নয়ন। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাত নিয়ে তুলনা করলেই বিএনপির দাম্ভিকতা চূর্ণ হতে বাধ্য।’
বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের সময়ে সারের জন্য কৃষকদের প্রাণ দিতে হয়েছিলো, তারা নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এসব কী স্থিতিশীলতার নজির?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির ক্ষয়িষ্ণু, মুখোশ পরা অর্থনীতির বিপরীতে টেকসই ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন আজ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অর্থনীতির বিস্ময়।’
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথা পিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার জানিয়ে কাদের বলেন, ‘ক্রমাগত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ঈর্ষনীয় প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান, দরিদ্র ও অতিদারিদ্র হ্রাস, দেশ-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ প্রতিটি সূচকে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের পথকে মসৃণ করেছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচক এবং মানব উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশ দিনদিন উন্নতি করছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির সময়কালে অর্থনৈতিক সূচকের পরিবর্তে যে সকল সূচকে তারা উন্নতি করেছিলো তা হচ্ছে - রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন, মুদ্রাপাচার, সাম্প্রদায়িক শক্তির তোষণ ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, বিএনপি কল্যাণমুখী অর্থনীতির বিপরীতে প্রতিষ্ঠা করেছিলো লুটপাটের অর্থনীতি।
‘দেশের অর্থনীতিকে অন্ধকার গহ্বর থেকে সমৃদ্ধির সোপানে উন্নীত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল অর্থনীতির মর্যাদায় অভিষিক্ত।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও আউট সোর্সিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে, অন্যদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়, প্রবাসী আয়ে ৮ম, ধান উৎপাদনে ৪র্থ, পাট রপ্তানিতে প্রথম এবং উৎপাদনে দ্বিতীয়, মিঠাপানির মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার বলেন, ‘সাইফুর রহমান সাহেবের ওপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থা ছিল, জিয়াউর রহমানের সাহেবের একটা আস্থা ছিল, গোটা জাতির একটা আস্থা ছিলে। ১২ বার তিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ রাতারাতি ভালো বাংলাদেশ হয়ে যায়নি।’
১৯৯১ সালে ভ্যাট প্রবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘তিনি ভ্যাট প্রবর্তন করেছেন চরম বিরোধিতার মুখে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ অনেক অনেকগুণ বেড়ে গেছে।’
বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং নারী শিক্ষার উন্নয়নের অবদানও সাইফুরকে দিয়েছেন ফখরুল। এসব বক্তব্যের জবাবে একদিন পরই আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি আমলের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরলেন।