১৯৯৮ সালে নিরুদ্দেশ হন বগুড়ার আমেনা খাতুন। অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয় পরিবার। সবাই ভেবে নেন তিনি ‘মৃত’। সন্তানরাও ভেবেছিলেন আর কখনও মায়ের দেখা পাবেন না।
সেই মাকে ২২ বছর পর ফিরে পেলেন তার ছেলেরা। নেপাল থেকে একটি বিশেষ বিমানে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার দুপুর ১টার দিকে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে আমেনাকে নিতে আসেন তার ছেলে আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও নাতি আদিলুর রহমান আদিল।
এ সময় আমেনার সঙ্গে ছিলেন নেপালের বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।
সরকারি সহযোগিতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুরো ঘটনা নিউজবাংলাকে জানান আমেনার নাতি আদিল।
আদিল জানান, ৪০ বছর ধরে তার দাদি মানসিক ভারসাম্যহীন। এর আগে তিনি সুস্থ ছিলেন। তিন ছেলে আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও ফরিদ মিয়ার জন্মের পর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর মেয়ে আম্বিয়ার জন্ম হয়।
আমেনার ছেলে ফটিক মিয়া ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে যান। সেদিনই আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই নিখোঁজ তিনি। সবাই ভেবে নিয়েছিলেন তিনি মারা গেছেন।
আদিলুর জানান, গত রোজার ঈদের আগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমেনা নেপালে আছেন বলে জানান। ছবি দেখালে আমেনার পরিচয় নিশ্চিত করে তার পরিবার।
- আরও পড়ুন: ২২ বছর পর বাড়ি ফিরছেন ‘নিখোঁজ’ আমেনা
শুক্রবার মাসুদ আলম সন্তানদের সঙ্গে আমেনার ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। ভিডিও কলে তিনি সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।
এ ঘটনায় মাসুদ আলম শনিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রমাণিক। ২২ বছর আগে ধুনটের আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর। ৬ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
সরকারি সহযোগিতায় দেশে ফিরলেন আমেনা। ছবি: নিউজবাংলা
যেভাবে খোঁজ মেলে আমেনার
মাসুদ ফেসবুকে আরও বলেন, ‘৩০ মে নেপালের সুনসারি জেলার কুইক রেসপন্স সেন্টার ‘ইনারুয়া সুনসারি’র মুকেশ মেহতা তার ফেসবুকে ইনারুয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র যমুনা গৌতম পোখরেলের তত্ত্বাবধানে একজন বাংলাদেশের নারী রয়েছে উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। এতে নেপাল বাংলাদেশ ইয়্যুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী আমাকে কমেন্টসে মেনশন করেন। এরপর আমিনার সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ১ জুন কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারিতে যাই। সে সময়ে নেপালজুড়ে লকডাউন এবং কোভিড আক্রান্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ইনারুয়াতে আমাকে সহায়তা করেন সুনসারির বাঙালি সমাজের সভাপতি বিপ্লব ঘোষ।
‘দীর্ঘ সময় আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে তার ঠিকানা উদ্ধার করে বগুড়া জেলা অফিসের প্রচেষ্টায় ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত হই। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে এই বৃদ্ধ অসহায় নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের নিকট পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের তার দেশের নাগরিক ও প্রবাসে অসহায় মানুষে প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত। আমিও সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষের সেবা করতে পেরে আনন্দে তৃপ্ত। মানুষতো মানুষেরই জন্য। আমেনার বাকি জীবন তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কাটুক এ প্রত্যাশা করি।’
কীভাবে তিনি নেপালে গেলেন সে বিষয় কেউ জানাতে পারেননি। তবে নেপালে এক নারীর আশ্রয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে।
বগুড়া এনএসআইয়ের উপপরিচালক মুজাহারুল ইসলাম মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলমের তথ্য পেয়ে আমরা ওই নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করি। মাসুদের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এটি দারুণ সাফল্য।’
আমেনার নাতি আদিল বলেন, ‘দুপুরে দাদীকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি আমরা। দাদিকে ফিরে পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি।’