বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বোনাস শেয়ারে লাগামের আদেশে স্বল্প মূলধনীর পতন

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:৩৬

একদিনের ব্যবধানে ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যাওয়ার কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরই আরেক নির্দেশনা। রোববার সংস্থাটি এক আদেশে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ারে লাগাম দিয়েছে। কোনো কোম্পানি চাইলেই আর বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। এভাবে মূলধন বাড়াতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নিতে হবে আগেই।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কমিটি গঠনের খবরে শেয়ার মূল্য লাফ দিলেও উল্টোচিত্র দেখা গেল পরের দিন।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৮টিই স্বল্প মূলধনী। এর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলো লোকসানি।

অবশ্য দাম যেভাবে লাফ দিয়ে ১০ শতাংশ বা আশেপাশে বেড়েছিল, উল্টোযাত্রায় অতটা কমেনি। সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে সাড়ে ৫ শতাংশের মতো।

হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যাওয়ার কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরই আরেক নির্দেশনা। রোববার সংস্থাটি এক আদেশে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ারে লাগাম দিয়েছে। কোনো কোম্পানি চাইলেই আর বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। এভাবে মূলধন বাড়াতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নিতে হবে আগেই।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় সূচকে বেশিরভাগ কোম্পানির প্রভাব নগণ্য। তাই দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির চেয়ে দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা বেশি হলেও সার্বিকভাবে সূচক বেড়েছে পুঁজিবাজারে। এ নিয়ে টানা ৫ কর্মদিবসে সূচক বাড়ল। লেনদেনও বেড়েছে।

সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বহুজাতিক বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার মূল্যে লাফ, বস্ত্র ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের উল্লম্ফন।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৫ পয়েন্ট, যা ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সেদিনের ডিএসই সূচক ছিল ৭ হাজার ১২৫ পয়েন্ট। এখন সূচকের নাম ডিএসইএক্স। ডিএসইর তুলনায় এর পয়েন্ট কিছুটা কম হয় অবশ্য।

দিন শেষে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা চলতি বছরের চতুর্থ সর্বোচ্চ।

আগের দিন লেনদেন ছিল ২ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কী চিত্র

ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরা স্বল্প মূলধনী তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে থাকলেও শেয়ার সংখ্যা কম, এমন বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।

এর ভিড়েও অবশ্য ফার্মা এইড, রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ারদরও বেড়েছে একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।

এমবি ফার্মা, শেয়ার প্রতি সবচেয়ে বেশি সম্পদমূল্যের লিব্রা ইনফিউশন, লোকসানি দুলামিয়া কটন, ওটিসি থেকে ফেরা মনস্পুল, এএমসিএল প্রাণ, রেনউইক যগেশ্বর, দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার মূল্যও বেড়েছে।

তবে দর হারানোর সংখ্যাই বেশি। লোকসানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৪.৭০ শতাংশ, ফাইন ফুডস ৪.৫৯ শতাংশ, মেঘনা মিল্ক ৪.৫৩ শতাংশ, মেঘনা পেট ৪.৩৬ শতাংশ, এপেক্স ফুড ৪.১৩ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড ৪.০৮ শতাংশ, ন্যাশনাল টিউব ৩.৯৫ শতাংশ, ইমাম বাটন ৩.৯০ শতাংশ, সোনালী আঁশ ৩.৮৯ শতাংশ, উসমানিয়া গ্লাস ৩.৭৪ শতাংশ, ইস্টার্ন কেবলস ৩.৬৪ শতাংশ, মুন্নু সিরামিক ৩.৬১ শতাংশ দর হারিয়েছে।

তিন খাতে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার বেশি

বস্ত্র, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বিবিধ খাতে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বস্ত্র খাতে।

এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ১০টির আর অপরিবর্তিত ছিল তিনটির দর। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা যা আগের দিন ছিল ২৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০ টি কোম্পানির মধ্যে বস্ত্র খাতের ছিল ৪টি, আর ২০টি কোম্পানির মধ্যে এই খাতের ছিল ৭টি।

তসরিফা, শেফার্ড ও এনভয় টেক্সটাইলের শেয়ারদর বেড়েছে একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।

সোমবার চারটি খাতে তিনশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে

এছাড়া শাসা ডেনিমের দর ৮.৬০ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৬.৪৫ শতাংশ, আলিফ টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৬.০৯ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া প্রকৌশল খাত অবশ্য দর হারিয়েছে। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ২৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

আগের দিন এই খাত ছিল লেনদেনে সেরা। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৩২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার।

এই খাতের শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫.২৮ শতাংশ বেড়েছে রানার অটোর দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.০৫ শতাংশ বেড়েছে সিঙ্গারের দর। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩.৯৮ শতাংশ বেড়েছে এসএস স্টিলের দর।

তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথমবারের মতো তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

দরও বেড়েছে। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১৫টির দর, কমেছে ৭টির।

এই খাতের শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের দর। ৮.৬৬ শতাংশ বেড়ে শেয়ার মূল্য হয়েছে ৫১ টাকা ৪০ শতাংশ।

এছাড়া ডরেন পাওয়ারের শেয়ারদর ৭.২৮ শতাংশ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের দর ৬.২৪ শতাংশ, সাইফ পাওয়ারের দর ৫.৮০ শতাংশ, এমবি ফার্মার দর ৫.৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

আগের দিন জ্বালানি খাতে লেনদেন ছিল ২৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

বিবিধ খাতেও লেনদেন তিনশ কোটি টাকার বেশি হয়েছে বেক্সিমকো লিমিডেটের তুমুল আগ্রহের কারণে। এই একটি কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ২৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর এ কারণে এই খাতের লেনদেন ৩১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা হয়েছে।

আগের দিন এই খাতে লেনদেন ছিল ২৭১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

ব্যাংক-বিমায় আরও দরপতন

বড় মূলধনীর ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারছেই না। দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে। এক বেক্সিমকো লিমিটেডের যত টাকার শেয়ার বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন, তার অর্ধেকের কিছু বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে ব্যাংক খাতের ৩২টি কোম্পানি মিলিয়ে।

এই খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন যা ছিল ২১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

এক দশক পর পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠার পরও সবচেয়ে ভালো লভ্যাংশ দেয়া এই খাতটির শেয়ারদর কেন বাড়ছে না, এ নিয়ে আলোচনা চলছে এক বছর ধরেই। কোনো একদিন দর বাড়লেও পরে বাড়তি দর আবার হারিয়ে ফেলে কোম্পানিগুলো।

আজও দাম বেড়েছে কেবল ৪টি ব্যাংকের আর কমেছে ২৩টির। বাকি ৫টি দর ধরে রাখতে পেরেছে। দাম বৃদ্ধি আর হারানোর অনুপাত অবশ্য খুবই কম। যেসব ব্যাংক দর হারিয়েছে, তার বেশিরভাগ হারিয়েছে ১০ থেকে ২০ পয়সা, ৩০ থেকে ৪০ পয়সা কমেছে দুই একটির আর একটির কমেছে ৬০ পয়সা।

একই চিত্র দর বাড়ার ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া ব্র্যাক ব্যাংকের দর বেড়েছে ৬০ পয়সা। ইসলামী ও পূবালী ব্যাংকের বেড়েছে ২০ পয়সা করে আর এক্সিম ব্যাংকের ১০ পয়সা।

ব্যাংক খাতের শেয়ারধারীদের হতাশা আরও বাড়িয়েছে সোমবারের লেনদেন

ব্যাংকের মতো দরপতন হয়েছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতেও। এই খাতে ৬টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৬টির দর। লেনদেন হয়েছে ১৮৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

আগের দিন দাম বেড়েছেল ১৮টির, তিনটির কমেছিল। লেনদেন হয়েছিল ২২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

জুন থেকে টানা দরপতনের বৃত্ত ভেঙে উত্থানের আভাস দেয়া বিমা খাতে পরপর দুই দিন কমল বেশিরভাগ শেয়ারের দর।

এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ২৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩টির দর। লেনদেন হয়ে ২৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩০২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

এই খাতের শেয়ারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫.৭৩ শতাংশ বেড়েছে প্রগতি লাইফের দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২.৭৭ শতাংশ বেড়েছে সাইনলাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর, তৃতীয় সর্বোচ্চ ২.৫৮ শতাংশ বেড়েছে পদ্মা লাইফের দর।

অন্যান্য খাতের কী চিত্র

জুনে অর্থবছর শেষ করা ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ১৪টির। একটির লেনদেন দীর্ঘদিন ধরেই স্থগিত।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে ২৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ২৭৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

লভ্যাংশ ঘোষণার সময় এগিয়ে আসায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ঢুকেছে তথ্য প্রযুক্তি খাতও। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথমবারের মতো লেনদেন একশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে খাতটিতে। লেনদেন হয়েছে ১১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৩টির।

আগের দিন এই খাতে লেনদেন হয়েছিল ৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

প্রধান অন্য খাতগুলোর মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ২০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৭টির, কমেছে ১২টির। লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

আগের দিন এই খাতে লেনদেন হয়েছিল ১১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

ভালো লভ্যাংশের পরেও হতাশা ছড়ানো মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত আবার দর হারিয়েছে। এই খাতের ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে ৮টির লেনদেন স্থগিত ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকি ২৮টির মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, কমেছে ১০টির আর দর ধরে রাখতে পেরেছে ৩৯টি।

লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর