বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টঙ্গীতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেহাল

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:১১

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, সময়মতো চিকিৎসক বা নার্সের দেখা পাওয়া যায় না। হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্যাথলজি পরীক্ষা করতে হয়। বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও সেগুলো ঠিকমতো দেয়া হয় না। নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় হাসপাতালেই বাসা বেঁধেছে মশা।

গাজীপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে আলাদা করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই হাসপাতালে সেবা পেতে নানা ভোগান্তির অভিযোগ করছেন রোগীরা।

রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসক বা নার্সের দেখা পাওয়া যায় না। হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্যাথলজি পরীক্ষা করতে হয়। বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও সেগুলো দেয়া হয় না। ভর্তি রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। এ ছাড়া যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় হাসপাতালেই বাসা বেঁধেছে মশা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে শয্যা রয়েছে ১৮৫টি। গেল ২১ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৫০ রোগী ভর্তি হয়। হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে কোনো প্যাথলজিস্ট নেই, নেই ব্লাড ব্যাংকও। রোগী অনুপাতে ওষুধের সরবরাহ খুবই কম।

সরেজমিনে ৫ আগস্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে সকাল থেকেই হাসপাতালে আসছে শত শত রোগী। তাদের অধিকাংশকে প্যাথলজি পরীক্ষা করতে পাঠানো হচ্ছে হাসপাতাল ঘেঁষা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

হাসপাতালের নতুন ভবনের ষষ্ঠতলায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড। পুরুষ ওয়ার্ডের সামনে দেখা যায় বারান্দায় ময়লার স্তূপ। ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনা পচে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

ওই ওয়ার্ডে ৪০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। অথচ তাদের সেবায় রয়েছেন মাত্র একজন নার্স। এ ছাড়া পাশে রোগীদের ব্যবহৃত টয়লেটটিও অপরিষ্কার। উত্তর পাশের নারী ও শিশু ওয়ার্ডেও একই চিত্র দেখা যায়।

এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ৬০ জন আউটসোর্সিং নিয়োগ করা হয়েছে। তবে তারা অনেকেই রোগীদের দেখভাল না করে হাসপাতালের দালালদের সঙ্গে সখ্য গড়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

২৭ আগস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন পূবাইলের মাজুখান এলাকার ইমন হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, হাসপাতালের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বমি চলে আসে। অভিযোগ করলে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় কর্তৃপক্ষ। প্যাথলজি পরীক্ষা ডাক্তাররা হাসপাতালের বাইরে যে ক্লিনিকের কথা বলেন সেখান থেকেই করতে হয়।

হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র ফেলা ময়লা আবর্জনা পচে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত মামুন বলেন, হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইনটাও ঠিকমতো দেয়া হয় না। নাপা, ওমিপ্রাজল ও ডমপেরিডনের বাইরে অন্য কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন রাকিবুল হাসান জানান, হাসপাতালে রোগীদের খুবই নিম্নমানের খাবার দেয়া হয়। সকালের নাশতায় যে রুটি দেয়া হয়, তাও মেয়াদোত্তীর্ণ।

সাড়ে তিন বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলে নুরায়েজকে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে আছেন নুরেজা বেগম। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেয়া হয়নি। বাইরে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন কিনে আনতে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও ক্লিনিক থেকে করিয়েছেন। ডেডিকেটেড হাসপাতালে এসে তাহলে কী লাভ। যদি সবকিছু বাইরে থেকেই কিনে আনতে হয় প্রশ্ন নুরেজা বেগমের।

সন্তানকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে আছেন টঙ্গীর বৌ-বাজার এলাকার আসমা বেগম। তিনি জানান, গেল ৪ দিনের মধ্যে ডাক্তার আসছে মাত্র এক দিন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম হাসপাতালের সক্ষমতার অভাবের কথা জানান। তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো প্যাথলজিস্ট বা রেডিওলজিস্ট নেই, এনালাইজার মেশিন নেই। এমনকি ব্লাড ব্যাংকও নেই।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে ফ্রি ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা আছে। ওষুধ, স্যালাইন সরবরাহ অনুযায়ী দেয়ার চেষ্টা করি। ২৫০ শয্যার হলেও আমাদেরকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল অনুযায়ী সবকিছু সরবরাহ করা হয়। ’

তবে নোংরা পরিবেশের কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর। কিন্তু রোগীর আত্মীয়রা যত্রতত্র ময়লা ফেলেন। আউটসোর্সিংদের প্রতিঘণ্টায় হাসপাতাল পরিষ্কার করার কথা বলা আছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মশারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর