বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘পেনিস ওয়ার্ম’ আরও ভালোবাসার যোগ্য

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:৫৯

সামুদ্রিক প্রাণ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ইকিউরানদের। অন্য প্রাণীদের খাবার বা বাসস্থান সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করে বলে এদের ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার’ বলা হয়ে থাকে।

অসাধারণ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর অস্ট্রেলিয়ার মহাসাগর। তিমি, ডলফিন, ডুগং কী নেই সেখানে! এই মহাসাগরের তীর ঘেঁষে আবাস বিচিত্র এক প্রাণীর, যার নাম ইকিউরান বা স্পুন ওয়ার্ম। পুরুষাঙ্গের মতো আকৃতির কারণে পেনিস ওয়ার্ম নামেও এটি পরিচিত।

একেবারেই নিরীহ দর্শন এই অমেরুদণ্ডী প্রাণী অস্ট্রেলিয়ার সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কেন এরা এত অদ্ভুত?

জীববিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ইকিউরানের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। ‘অনন্য প্রাণী’ হিসেবে তাদের বর্গও আলাদা। ইকিউরানকে ধরা হয় অ্যানিলিড ওয়ার্ম বর্গের বিশেষ এক প্রাণী, যাদের শরীরে বিভাজন রেখা বিলুপ্ত হয়েছে। ঠিক কত ধরনের ইকিউরান রয়েছে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না হলেও এখন পর্যন্ত ২৩৬ প্রজাতির তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।

বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইকিউরানের সবচেয়ে বড় প্রজাতি লম্বায় সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। দেহ পেশিবহুল সসেজ আকৃতির এবং একদম সামনে প্রোবসকিস বা জিহ্বাগহ্বর রয়েছে। ঢেউয়ের মতো সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে এর দেহ নড়াচড়া করে।

সাধারণত সাগরতটের বালু ও কাদার গর্তে এদের বসবাস। কিছু কিছু প্রজাতি পাথরের ফাঁকেও গড়ে তোলে আবাস। সাগরের ৬ কিলোমিটার গভীর থেকে শুরু করে সৈকত পর্যন্ত দেখা মেলে এদের।

ওকেটোস্টোমা অস্ট্রালিয়েনসি (Ochetostoma australiense) প্রজাতির কথাই ধরা যাক, এদের দেখা যায় কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের বালুকাময় সৈকতে। গর্ত থেকে বের হয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে।

বোনেলা ভিরিডিস (bonella viridis) নামের আরেকটি প্রজাতিতে স্ত্রী ও পুরুষ প্রাণীর আকৃতির রয়েছে বিরাট পার্থক্য। স্ত্রীরা ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে পুরুষের দৈর্ঘ্য মাত্র ১ থেকে ৩ মিলিমিটার।

অধিকাংশ ওয়ার্মের লার্ভার কোনো লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নেই। আশপাশে কে আছে তার ওপর ভিত্তি করে এদের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। স্ত্রী ওয়ার্মের সংস্পর্শে লার্ভাগুলো পুরুষে পরিণত হয়, আর যখন কোনো স্ত্রী ওয়ার্ম থাকে না তখন সেগুলো রূপান্তরিত হয় স্ত্রীতে।

এই প্রাণীর পুরুষের ভূমিকা নিতান্তই সাধারণ। প্রজনন সক্রিয়তা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই এরা পুরোপুরি নির্ভর করে স্ত্রী ওয়ার্মের ওপর।

প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

সামুদ্রিক প্রাণ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ইকিউরানদের। অন্য প্রাণীদের খাবার বা বাসস্থান সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করে বলে এদেরকে ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারও’ বলা হয়ে থাকে।

এরা যেসব গর্ত বানিয়ে থাকে সেগুলো অন্য প্রাণীদেরও কাজে আসে।ইকিউরানদের গর্তে বসবাস করে অন্যান্য মিথোজীবী ক্রাস্টাসিয়ানস (চিংড়ি জাতীয় প্রাণী) ও বাইভালভ মোলাস্ক (শামুক ও ঝিনুক প্রজাতির প্রাণী)।

মানুষের জন্যেও এরা উপকারী। এদের থাকা ও খাওয়ার অভ্যাস মাটিতে বায়ু চলাচল ও পলি জমতে সহায়তা করে। অনেকটা আমাদের দেশের কেঁচোর মতোই ভূমিকা রাখে ইকিউরানেরা। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতের ইকিউরানদের কারণে সমুদ্রতলে বর্জ্যের প্রভাব কমেছে।

ইকিউরানরা মাছের খাদ্যের জন্যও প্রয়োজনীয়। গভীর পানির হাউন্ডশার্ক ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলাস্কান প্লাইসের উদরপূর্তিতে সাহায্য করে এরা। বেরিং সাগরের প্যাসিফিক ওয়ালরাস (সিন্ধুঘোটক) ও সাদার্ন সি অটারের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীরাও একে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে বিপন্ন প্রজাতির পাখি ইস্টার্ন কারলিউরেরও পছন্দের খাবার এই ইকিউরান।

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ ইকিউরানকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এগুলোকে কেটে কাঁচা খাওয়া হয়। অথবা গেয়বুল-জোত নামের আচার বানানো হয়। এদের স্বাদ মূলত নোনতা, তবে হালকা মিষ্টিভাব আছে।

ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও উপকূলে উন্নয়নের প্রভাবে কমছে ইউকিউরানের সংখ্যা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের কারণে সামুদ্রিক ভূকম্পনও ক্ষতি করছে এই প্রাণীর। তাদের আশঙ্কা, সংরক্ষণের জরুরি উদ্যোগ না নিলে পুরোপুরি বিলুপ্ত হতে পারে অনন্য এই অমেরুদণ্ডী প্রাণীটি।

এ বিভাগের আরো খবর