বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হল খুলতে ঢাবির নতুন নীতিমালা, অছাত্র নিষিদ্ধ

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:৫৮

হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় নীতিমালার আলোকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করেছে হল প্রশাসন। সেই এসওপি এরইমধ্যে প্রভোস্ট কমিটির সভায় পাস হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি কমে আসা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়া সাপেক্ষে আগামী অক্টোবরের শুরুতে আবাসিক হল খুলে দিতে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজের গতি বাড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রশাসনের এমন তোড়জোড় দেখে শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে।

এ ছাড়া, হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় নীতিমালার আলোকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করেছে হল প্রশাসন। সেই এসওপি এরইমধ্যে প্রভোস্ট কমিটির সভায় পাস হয়েছে।

উপাচার্যের অনুমোদন পেলেই নতুন এই নীতিমালায় চলবে করোনা পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম।

নতুন নীতিমালায় হলগুলোতে গণরুম না রাখার পরিকল্পনার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হল খুললে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেয়া হবে না। যারা হলের বৈধ শিক্ষার্থী, যাদের টিকা নেয়া হয়েছে, কেবল তারাই হলে উঠতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব শেষ, তাদের হল ছেড়ে দিতে হবে। সেসব ফাঁকা আসনে গণরুমের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।’

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকি শিক্ষার্থীরাও হলে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবছে, জানতে চাইলে আব্দুর বাছির বলেন, ‘আমাদের কোন পুলিশ, বিজিবি বা র‍্যাব নেই। শিক্ষার্থীরাই আমাদের পরম অবলম্বন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের সংস্কৃতি মেনে আশা করি তারা নির্দেশনা মেনে চলবে।’

আবাসিক হলগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক সংস্কার কাজ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি আবাসিক হলে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে হাত ধোয়ার বেসিন। দীর্ঘদিনের ধুলোয় মলিন ডায়নিং ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুম ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।

পরিবর্তন করা হয়েছে টয়লেট ও গোসলখানার ভাঙা পাইপ, কমোড। অনেক দেয়ালে নতুন পলেস্তারা দিয়ে করা হচ্ছে রং। বাগানে লাগানো হচ্ছে নতুন ফুলগাছ, কেটে ছোট করা হচ্ছে মাঠের ঘাস।

১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের এসব কাজ সম্পন্ন করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি শেষ করতে ছুটির দিনেও কাজ চলছে পুরোদমে।

হল সংস্কারের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের প্রধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে আমাদের হলের প্রবেশ পথে নতুন করে একটি বেসিন বসিয়েছি। প্রতিটি ওয়াশরুমকে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। আমাদের সংস্কার কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করি, বাকি কাজগুলো ১০ তারিখের আগেই শেষ করতে পারব।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘পুরোদমে হল খোলার প্রস্তুতি চলছে, ছুটির দিনেও কাজ চলমান। হলের ২-৩ জন সিনিয়র হাউজ টিউটর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। ১০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে আমাদের হল পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুত হবে। যখনই হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসবে, তখনই আমরা হল খুলে দিতে পারব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘হল খোলার বিষয়ে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই মোতাবেক আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রাধ্যক্ষদের যেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তারা সেভাবে কাজ করছেন।’

করোনাকালে যেভাবে চলবে আবাসিক হল

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে নতুন স্ট্যান্ডার্ড এসওপি।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুল বাছির বলেন, ‘হল প্রশাসন ও ছাত্রদের মাধ্যমেই মূলত এই এসওপি বাস্তবায়ন করা হবে। এসওপি তিনটা অংশে বিভক্ত। এগুলো হলো আবাসন, স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসা।

নীতিমালায় আবাসনের বিষয়ে বলা হয়েছে, একজন আবাসিক শিক্ষার্থী কোনোভাবে মেঝেতে থাকতে পারবে না। রুমের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চারজন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে।

স্বাস্থ্যবিধির পরিকল্পনা নিয়ে বলা আছে, প্রতি শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হলে প্রবেশের সময় বেসিনে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা যাবে না। মসজিদ-ক্যান্টিন এসব জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।

হলে প্রবেশের পর কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত হলে যদি গুরুতর অসুস্থ না হয় তবে প্রশাসনকে আগেই জানাতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

তবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলো মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে সেগুলোকে চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।

এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে।

অছাত্ররা থাকতে পারবে না আবাসিক হলে

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার পর ছাত্রত্ব নেই এরকম শিক্ষার্থীদের হলে না রাখার বিষয়ে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা হলে থাকতে আসবে কেন এই প্রশ্নটা তাদেরও করতে হবে। তাদের পড়াশুনা শেষ, তারা তাদের মতো করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ- এমন কেউ হলে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা ও হলগুলোতে যাতে শিক্ষার্থীরাই থাকে, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ কমিটির সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সেদিন রাত ৯টায় ভার্চুয়াল ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষরাও যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।

ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছাত্রসংগঠনগুলো এবং পরিবেশ পরিষদ একমত হয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রক্টর।

এ বিভাগের আরো খবর