করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ খোলার তারিখ জানিয়ে ১৯টি নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষার্থীদের চাপ না দিয়ে সহমর্মিতার সঙ্গে পড়াতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার আগে এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আগামী রোববার ক্লাস শুরুর তিন দিন আগে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এসব কাজ শেষ করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে প্রস্তুতির জন্য আর চার দিন সময় আছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে পালন করতে হবে, শিক্ষক ও অভিভাবকদের করণীয় কী, এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কী করবে, তার বিস্তারিত বলে দেয়া আছে এই ১৯ নির্দেশনায়। এসব নির্দেশনা ঠিকঠাকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার ৯ দিন পর ১৭ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে ছুটি বাড়িয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জুন মাসের শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ দিয়েও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সে পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সরকার। জুলাই থেকে আরও কঠোর বিধিনিষেধে যায় সরকার।
তবে প্রায় তিন মাস পর করোনা আবার নিম্নমুখী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজে আবার সশরীরে ক্লাসের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি।
ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহ বাকি থাকতে রোববার ১৯ দফা এই নির্দেশনা আসে।
যা যা করতে হবে
জানানো হয়েছে, শিক্ষাঙ্গনের প্রবেশমুখে করোনার স্বাস্থ্যবিধি ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রবেশপথে সব শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের তাপমাত্রা মাপতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশমুখ ব্যবহার করতে হবে। যদি কেবল একটি প্রবেশমুখ থাকে সে ক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানাতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী বক্তব্য দিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের আনাগোনা না থাকায় রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের ভেতরে এই দশা তৈরি হয়েছে
প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে।
শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্বে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে।
এর মানে কী- জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন কত শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে, এটা কমছে কি না, তা তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।’
রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুলের এই শ্রেণিকক্ষটি শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে
সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে।
প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে পড়াতেও বলা হয়েছে।
এই নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা যেন চাপ না দেন। অনেকটাই গ্যাপ ছিল। তাদের বুঝিয়েশুনিয়ে যেন পড়ানো হয়, সেটি আমরা বলে দিয়েছি।’
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানি সংযোগজনিত মেরামত আগেই শেষ করতে হবে।
স্কুল বা কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।