বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক ভোজ্যতেলের সূচক চলতি বছরের জুন থেকে ৯১ শতাংশ। এটি আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক খাদ্যের দাম এ বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এ দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম এই মুহূর্তে ক্রেতাদের উদ্বেগের এক কারণ। এই অবস্থায় বৈশ্বিক পরিস্থিতির এই চিত্র ভবিষ্যতে আরও বেশি দামে তেল কিনতে হয় কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসে।
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে প্রায় ২০ লাখ টন। এর প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, মজুত কমে আসা দেশের বাজারেও প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ধরা হয়েছে ১২৯ টাকা। আগে এ দাম ছিল ১২৫ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ধরা হয়েছে ১৫৩ টাকা, যা আগে ছিল ১৪৯ টাকা।
৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭২৮ টাকা ধরা হয়েছে, যা আগে ছিল ৭২৪ টাকা। আর খোলা পাম সুপার প্রতি লিটার ১১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১১২ টাকা।
উৎপাদক মালয়েশিয়ার চিত্র
শ্রমঘাটতি, খরা, কীটপতঙ্গের উপদ্রবসহ আরও বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন উৎপাদকরা।
এতে পাম, সয়াবিন, রাই সরিষা, সূর্যমুখী তেলের মতো ভোজ্যতেলের মজুত এক দশকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমঘাটতি দেখা দেয়ায় ভোজ্যতেল উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছেন মালয়েশিয়ার পেরাক প্রদেশের জমির মালিকরা।
তেলের দর বিশ্বে এ মুহূর্তে রেকর্ড ছুঁয়েছে।
মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ। তবে এ খাতে দেশটি এ মুহূর্তে চরম সংকটে রয়েছে।
এতে আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাম অয়েলের দাম বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের চাহিদাই বেশি।
পেরাকের স্লিম রিভার শহরের এস্টেট ম্যানেজার রবি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘নতুন শ্রমিক পাওয়া এখন অনেক কঠিন। শস্য উৎপাদনে পর্যাপ্ত শ্রমিক আমরা পাচ্ছি না।’
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ভোজ্যতেল উৎপাদকরা বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
বৈশ্বিক পাম তেল রপ্তানির প্রায় ৩৩ শতাংশ করে মালয়েশিয়া।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি হেক্টর জমিতে ৭.১৫ টন পাম উৎপাদন হয়। এক বছর আগে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭.৮৫ টন পাম উৎপাদন হয়েছিল।
মালয়েশিয়ার পাম অয়েল বোর্ডের ডেটা অনুযায়ী, অপরিশোধিত পাম তেল উৎপাদন প্রতি হেক্টরে এক বছরে গড়ে ১.৫৬ টন থেকে ১.৪১ টনে নেমে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শস্যক্ষেতের এক ব্যবস্থাপক বলেন, ‘সারাওয়াক প্রদেশের অবস্থা বেশি খারাপ।
‘শ্রমঘাটতির কারণে সেখানে কয়েকটি কোম্পানির উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে যেতে দেখেছেন।’