গাজীপুরের পূবাইলে ঝুটগুদামে লাগা আগুন প্রায় চার ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
মাজুখান এলাকার একতা ঝুট মিলের গুদামের আগুন রোববার বেলা ২টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক আব্দুল হালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন এরই মধ্যে ব্যারিকেড হয়ে গেছে। অর্থাৎ আগুন যেখানে জ্বলছে সেখানেই জ্বলবে আর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
‘এখানে থাকা ঝুট কাপড় অ্যাথরেটিক ও পলেস্টার জাতীয়। এ জন্য আগুনে পানি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আবারও জ্বলে ওঠে। গুদামঘরগুলো অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছে। আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’
রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে একতা ঝুট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মার্কেটে নজরুল ইসলামের ঝুটের গুদামে আগুন লাগার পর প্রথমে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নেভানো শুরু করে। পরে উত্তরা থেকে একটি, গাজীপুর থেকে দুটি ও ঢাকা হেডকোয়ার্টার থেকে একটি ইউনিট আসে।
স্থানীয়রা জানান, গুদামে ৬ থেকে ৭ জন নারী শ্রমিক ঝুট বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। হঠাৎ গুদামে আগুন লেগে আশপাশের গুদামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই মার্কেটে দেড় শতাধিক তুলা ও ঝুটের গুদাম আছে। এর মধ্যে ৭০টি পুড়ে গেছে।
ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির জানান, নজরুলের গুদামে বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। হঠাৎই শ্রমিকরা আগুন দেখতে পান। এর আগেও এভাবে আগুন লেগেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গুদাম মালিক জানান, টঙ্গীর মিলগেট এলাকার ব্যবসায়ীরা দুই বছর আগে এখানে প্রায় শতাধিক গুদাম তৈরি করেন। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাপনার জন্য গুদাম মালিকরা প্রতি ১ হাজার স্কয়ার ফুটের জন্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। তাদের পানির মোটর ও পাইপ বসানোর কথা থাকলেও এতদিনেও কাজ হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত ঝুট ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ‘চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার মালামাল পুড়ে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। তিনমাস আগেও এই জায়গায় আগুনের ঘটনা ঘটে কিন্তু সেটি তুলনামূলক ছোট আগুন ছিল। এবারের আগুন আমাদের একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে।’
আরেক ঝুট ব্যবসায়ী রঞ্জু সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার ব্যবসায় মন্দা চলছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েকদিন আগেই পাঁচ লাখ টাকার ঝুটের মাল তুলেছিলেন। আগুন তাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিলো। আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না জানেন না।
আরেক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ছয় মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুন তার ব্যবসার সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন কীভাবে করাবেন স্ত্রীর চিকিৎসা আর কীভাবে সংসার চালাবেন সে কথা ভেবে গুদামের সামনে বসে কাঁদছিলেন হুমায়ুন কবির।