ইভ্যালির কাছে মার্চেন্টদের পাওনা ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে ওই পরিমাণ টাকা কত সংখ্যক মার্চেন্ট পায় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করা হয়নি চিঠিতে।
গত বৃহস্পতিবার ইভ্যালির পাঠানো চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে রোববার। এই নিয়ে গত ৩১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইভ্যালির কাছে তিন ক্যাটাগরিতে জানতে চাওয়া সবকটি প্রশ্নের পুরোপুরি ও আংশিক জবাব দিলো ইভ্যালি।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে ১৯ আগস্টের মধ্যে মোট দায় ও সম্পদের পরিমাণ, ২৬ আগস্টের মধ্যে গ্রাহকের মোট দেনার তথ্য এবং ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্চেন্টদের পাওনা সংক্রান্ত তথ্য জানতে সময় বেঁধে দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল তার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বাধ্য হন।
প্রথম চিঠিতে রাসেল জানান, গ্রাহকের কাছে অগ্রিম, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা, ব্যবসায়িক ব্যয় সংক্রান্ত দেনাসহ অন্যান্য সব দেনাবাবদ ইভ্যালির মোট চলতি দায়ের পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৮ হাজার ৪৮২ টাকা।
দ্বিতীয় চিঠিতে জানানো হয় গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির মোট দায় ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০৭ টাকা। ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির এ দায় তৈরি হয়েছে।
সবশেষ ২ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে ইভ্যালির কাছে মার্চেন্টদের পাওনা ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ টাকা বলে জানান রাসেল।
মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ইভ্যালির সবশেষ চিঠিতে রাসেল জানান, গ্রাহকের কাছে তার ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০৭ টাকার যে দেনা রয়েছে তা আগামী ৫ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন। মন্ত্রণালয়কে তিনি জানান, ব্যবসায়িক স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা ও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ লাভের মাধ্যমে এ দেনা পরিশোধ করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে রাসেল বলেন, যেকোনো ব্যবসায় ক্রেডিট সুবিধা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং তা যুগ যুগ ধরে প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। ইভ্যালির সঙ্গে সকল সরবরাহকারীর ক্রেডিট সুবিধা সংক্রান্ত চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে। যেকোনো সরবরাহকারীর সঙ্গে ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ক্রেডিট সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়।
রাসেলের দাবি, ইভ্যালি সরাসরি উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে। এই সরবরাহকারীরা গড়ে ন্যূনতম ১৫-২০ শতাংশ হারে মুনাফা অর্জন করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। তাই যে অর্থ বর্তমানে দেনা হিসাবে আছে তা অতি স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য একটি পরিমাণ।
ইভ্যালির এমডি বলেন, করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে সরবরাহকারীরা ইভ্যালির মাধ্যমে অতি সহজভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। গতানুগতিক ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মজুদ রাখা, বিক্রয় ও বিপণন, বিক্রয় প্রদর্শন কেন্দ্র পরিচালনা, প্রসারসহ যাবতীয় ব্যয় সাশ্রয় করতে পারেন বিধায় সরবরাহকারীরা অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
রাসেল বলেন, ‘বর্তমানে ইভ্যালি নতুন নীতিমালার আলোকে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পুরাতন অর্ডারের সরবরাহও করে আসছে। সেই পুরাতন অর্ডারগুলোর ডেলিভারি রিপোর্টও ইক্যাবের কাছে উপস্থাপন করা হয়। একই ধারায় পর্যায়ক্রমে আমরা গ্রাহকদের পুরাতন অর্ডারগুলো সরবরাহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
ইভ্যালির জবাব দেয়া শেষ হয়েছে, মন্ত্রণালয় এ জবাবে সন্তুষ্ট কি-না কিংবা যদি না হয় তাহলে ইভ্যালির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আরজেএসসি ও এনবিআর থেকে তথ্য নিয়ে ইভ্যালির দেয়া সবকটি হিসাব মিলিয়ে দেখব। এতে যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে, সে বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে।’