গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েছেন আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কথিত মালিক ও বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা।
গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের মামলার আসামি সোহেল রানা কীভাবে দেশ থেকে পালালেন, কোথায় যেতে চেয়েছিলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর তার মুখ থেকেই জানতে পেরেছে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তার স্বীকারোক্তিমূলক কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সোহেল জানান, বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বাবু নামের এক ব্যক্তি তাকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভারত সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দেন। এরপর একজন ভারতীয় তাকে টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে আশ্রয় দেন। পরে কোচবিহার জেলার চেংড়াবান্দা সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ তাকে আটক করে।
ভিডিওতে সোহেল রানা জানান, তার লক্ষ্য ছিল শিলিগুড়িতে যাওয়া, সেখানে কপিল নামে তার একজন বন্ধু রয়েছেন। কপিলের মাধ্যমে নেপালে যাবার কথা ছিল তার। নেপাল থেকে কিছুদিন পর ইউরোপ পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা ছিল সোহেলের।
সোহেলকে আটকের সময় তার কাছে পাসপোর্ট, কয়েকটি দেশের মুদ্রা, থাইল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়। ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের মামলায় সোহেলকে তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে কোচবিহার আদালত।
১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ই-অরেঞ্জের মালিক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গত ১৭ আগস্ট মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। মামলাটির তদন্ত চলছে। এ মামলায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রধান তিন আসামি সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী।
সোনিয়া মেহজাবিন কাগজে-কলমে ই-অরেঞ্জের মালিক হলেও তার ভাই শেখ সোহেল রানা আড়ালে থেকে সব পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, গত কয়েক মাসে সোহেল রানা ই-অরেঞ্জ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তার অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। অরেঞ্জ বাংলাদেশের বিনিয়োগ রয়েছে বেশ কিছু ব্যাবসায়িক খাতে।
ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে সোহেল রানার প্রায় আড়াই কোটি টাকা উত্তোলনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপর গত ২৮ আগস্ট ৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোহেল রানাসহ ই-অরেঞ্জের ১০ জন মালিক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন টিটু নামের একজন গ্রাহক। আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে গুলশান থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে।
পরের দিন বনানী থানায় নিজ কর্মস্থলে যোগ দেননি সোহেল রানা। আর শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, অনুপ্রেবেশের অভিযোগে দেশটির নেপাল সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেছে বিএসএফ।
ই-অরেঞ্জের কথিত মালিক ও বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত
দেশে ফেরানোর পথ খুঁজছে পুলিশ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হওয়া সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ না হলেও পুলিশ থেমে নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
নিজ কার্যালয়ে রোববার দুপুরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ভারতে গ্রেপ্তার পুলিশ ইন্সপেক্টর সোহেলকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চলছে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি অত সহজ নয়। তবু আমরা আশা করছি, দ্রুত একটি ফল পাওয়া যাবে।’
সোহেলের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে সোহেল টাকা তুলেছে- এটা তো জানা গেছে। আর সে যেহেতু এখন পালিয়েছে, তাই বোঝাই যাচ্ছে সে এটার সঙ্গে ইনভলভড। তার নামে একটি মামলা হয়েছে, গুলশান থানা সেটার তদন্ত করছে। সেটার রিপোর্ট পেলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’