বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকা ফেরত চায় এশিয়াটিক, গবেষণায় সময় চান ঢাবি অধ্যাপক

  •    
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:৩৪

এশিয়াটিকের ভাষ্য, তিনবার চিঠি দেয়ার পরও ফেলোশিপের অর্থ ফেরত দেননি অধ্যাপক ফিরোজা। অন্যদিকে ফিরোজার অভিযোগ, এশিয়াটিক সোসাইটি সব গবেষকদের সঙ্গে সমান আচরণ করছে না। অন্য গবেষকদের সময় বাড়িয়ে দেয়া হলেও তার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন।

ফেলোশিপের শর্ত অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে গবেষণাকর্মটি শেষ করার কথা ছিল তার। সেটি চার বছরেও সম্পন্ন করতে পারেননি এ অধ্যাপক। এ কারণ দেখিয়ে ফেলোশিপের জন্য দেয়া অর্থ ফেরত চেয়েছে সোসাইটি।

এশিয়াটিকের ভাষ্য, তিনবার চিঠি দেয়ার পরও ফেলোশিপের অর্থ ফেরত দেননি অধ্যাপক ফিরোজা।

অন্যদিকে ফিরোজার অভিযোগ, এশিয়াটিক সোসাইটি সব গবেষকদের সঙ্গে সমান আচরণ করছে না। অন্য গবেষকদের সময় বাড়িয়ে দেয়া হলেও তার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমি এ কাজ করতে চাই। সোসাইটিকে বলেছি যেন আমাকে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তারা আমাকে সময় দিচ্ছে না।

‘অথচ আমার সাথেই যারা ফেলোশিপ পেয়েছে, তাদের মধ্যে দুইজনকে টাইম এক্সটেনশন দেয়া হয়েছে। এটি এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা।’

২০১৭ সালে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপের জন্য এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন করেন ফিরোজা ইয়াসমীন। যাচাই-বাছাই ও ভাইভা শেষে একই বছরের ৫ এপ্রিল এ অধ্যাপককে ফেলোশিপ দেয়া হয়।

এশিয়াটিক সোসাইটি জানায়, সমাজ ও ভাষা বিজ্ঞানের ওপর ফিরোজাকে দেয়া হয় ফেলোশিপ। শর্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে তার গবেষণাকর্মটি শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি তার গবেষণাকর্মটি এ সময়ের মধ্যে জমা দিতে পারেননি।

সোসাইটির ভাষ্য, নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ না করায় অনুদানের অর্থ ফেরত দিতে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত তিনবার চিঠি দেয়া হয় ফিরোজাকে। এরপরও এ অর্থ ফেরত দেননি তিনি।

সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, ফেলোশিপের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কয়েক ধাপে তুলতে হয়। ফিরোজা শুধু প্রথম ধাপের অর্থই তুলেছেন। এ সংখ্যাটা ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। এ অর্থই ফেরত দিতে সোসাইটি থেকে তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

ফিরোজা ইয়াসমীনের গবেষণা অনুদানের অর্থ ফেরত না দেয়ার বিষয়টি অবহিতকরণের জন্য সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ গত ২৬ আগস্ট সংস্থার সব সদস্যকে চিঠি দেন।

কী আছে চিঠিতে

এশিয়াটিক সোসাইটির চিঠির একটি কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে। এতে বলা হয়, ‘ফেলোশিপের শর্তানুযায়ী, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও ফিরোজা ইয়াসমীন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি জমা দিতে ব্যর্থ হন। শর্তানুযায়ী, এই গবেষণার মেয়াদ কোনো অবস্থাতেই বাড়ানোর বিধান ছিল না।’

চিঠিতে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী ফিরোজার বিষয়টি ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর সোসাইটির রিসার্চ অ্যান্ড সেমিনার কমিটির সভায় আলোচনা হয়। গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করে ফিরোজা অনুদানের অর্থ নির্ধারিত গবেষণাকর্মে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন মর্মে নিশ্চিত হয় সোসাইটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেয়া অনুদান বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

এশিয়াটিকের কাউন্সিল সে সুপারিশ ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর অনুমোদন করলে ফিরোজা ইয়াসমীনকে চিঠির মাধ্যমে ফেলোশিপের অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উক্ত গবেষণা অনুদানের সময়সীমা ছিল এক বছর, যা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনোক্রমেই বর্ধিত হতে পারে না। অধিকন্তু এই দীর্ঘ সময়ে তার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি গবেষণা কর্মের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতির প্রতিবেদন সোসাইটিতে জমা দিতে ব্যর্থ হন। ফলে তাকে প্রদত্ত ফেলোশিপ সোসাইটির কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে বাতিল হয়।’

ফিরোজা ইয়াসমীনের ভাষ্য

এ বিষয়ে অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেলোশিপে বলা ছিল, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে গবেষণাকাজের অগ্রগতি জানার জন্য সোসাইটি আমার সাথে চার মাস পরপর মিটিং করবে, কিন্তু সেই এক বছরে তারা আমার সাথে কোনো যোগাযোগই করেনি। ২০১৯ সালে এসে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে।

‘সে সময় সোসাইটি থেকে আমাকে ডাকা হয়। আমি বলেছি, আমাকে সময় দেন; আমি কাজ করব। তারা রাজিও হয়েছিল। কিন্তু যখনই আমি ২০২০ সালে সোসাইটির কাউন্সিল নির্বাচন করি এবং হেরে যাই, এরপর থেকেই তাদের আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়।’

ফিরোজা বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া গবেষণায় কমন নেচার। এশিয়াটিক সোসাইটিও অনেক গবেষককে অতিরিক্ত সময় দিয়েছে। এমনকি আমার সাথেই যারা ফেলোশিপ পেয়েছে তাদের মধ্যে দুইজনকে টাইম এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছে।

‘শুধু আমাকেই দেয়া হচ্ছে না। কারণ আমি সোসাইটির কাউন্সিল নির্বাচন করেছি। আমার মনে হচ্ছে, এই নির্বাচন করাই আমার অপরাধ।’

ফিরোজা বেগম আরও বলেন, ‘সোসাইটি থেকে আমাকে ব্যর্থ বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি তো ব্যর্থ না। আমি তো বলিনি আমি কাজটি করতে পারব না।

‘চলতি বছরের গত ২৯ জুলাই আমার গবেষণাকাজের একটি খসড়া চ্যাপ্টারও সোসাইটিতে জমা দিয়েছি।’

এশিয়াটিক সোসাইটি মানসিক নির্যাতন করছে অভিযোগ করে অধ্যাপক ফিরোজা বলেন, ‘গত দুই বছর যাবত এশিয়াটিক সোসাইটি আমাকে মানসিক নির্যাতন এবং সামাজিক হেনস্তার মধ্যে রেখেছে, যেটি আমি প্রত্যাশা করি না।

‘আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন এশিয়াটিক সোসাইটি সকল রিসার্চারের জন্য সমান আচরণ প্রদর্শন করবে, যেটি বর্তমান কাউন্সিল করছে না।’

এশিয়াটিকের সাধারণ সম্পাদক কী বলছেন

ফিরোজার অভিযোগের বিষয়ে এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।

চলতি বছরের ২৯ জুলাই গবেষণার একটি অংশ জমা দেয়া নিয়ে ফিরোজার বক্তব্যের বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ‘ফিরোজা ইয়াসমীন যখন একটি অংশ জমা দিয়েছেন, এর আগেই তার প্রজেক্টটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাতিল হয়ে যায়। কাউন্সিলের মিটিংয়ে কারো রিসার্চ গ্রান্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সে রিসার্চের একটি অংশ জমা দেয়া, এটি ম্যাটার করে না।’

২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সোসাইটি থেকে ফিরোজার সঙ্গে যোগাযোগ না করার বিষয়ে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সোসাইটির কাজের কারণে হয়তো উনার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। কিন্তু চার মাস পর পর রিপোর্ট জমা দেয়া উনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কনট্রাক্টে সেভাবেই লিখা আছে। সেটি তো উনি করেননি।’

সাব্বির বলেন, ‘এটি একটি মিউচ্যুয়াল কনট্রাক্ট। রিসার্চ ছাড়াও সোসাইটির অনেক কাজ থাকে। সেগুলোও আমাদের করতে হয়। কিন্তু আমরা উনাকে জানাইনি বলে উনি জমা দিবেন না, এটি কখনো কোনো রিসার্চ গ্রান্টে হয় কি না, আমি জানি না।’

দুজন গবেষকের সময় বাড়ানো নিয়ে ফিরোজা ইয়াসমীনের বক্তব্যের বিষয়ে সোসাইটির পরিচালক বলেন, ‘এটি খুবই অন্যায় এবং আপত্তিকর অভিযোগ। যে দুজনের সময় এক্সটেনশন করা হয়েছে, তাদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অন্যজন বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার। সে সময় উনাদের কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি ছিল।

‘তাদের কাজের অগ্রগতিতে রিসার্চ এবং সেমিনার কমিটি সন্তুষ্ট ছিল। আর উনাদের গবেষণার সুপারভাইজারও ভালো রিপোর্ট দিয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে একবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছি।’

টাকা ফেরতের বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ‘এখানে কারও প্রতি কোনো বৈষম্য করা হয়নি। সোসাইটির নিয়ম মেনেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উনাকে টাকা ফেরত দিতেই হবে।

‘এখন উনি যদি টাকা ফেরত না দেয়, তাহলে বিষয়টা সোসাইটির কাউন্সিলের মিটিংয়ে উঠবে। সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর