জালাল আহমেদের বেড়ে ওঠা সংগীতের মাঝে। বাবা রহিম চাঁদ ও মা বিলকিস বানু বাউল গানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাড়িতে নিয়মিত বসত বাউল আসর।
বাবা ও বড় ভাইরা যখন বাঁশি বাজাতেন তখন ছোট্ট জালালও তাদের সঙ্গে বাজাতে চেষ্টা করতেন। বয়স যখন ১৩ বা ১৪ তখন ছেলের আগ্রহ দেখে বাঁশি কিনে এনে দেন বাবা।
সেই থেকে শুরু জালালের বাঁশি বাজানো। পরিবারের সবার অনুপ্রেরণা আর নিজের চেষ্টায় নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের জালাল এখন একজন সুপরিচিত বাঁশিবাদক হয়ে উঠেছেন। বাঁশিই তার নেশা, বাঁশিই পেশা।
বাঁশিবাদক জালাল আহমেদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। স্বতঃস্ফূর্ত আলাপে জানিয়েছেন নানা কথা।
নিউজবাংলা: কবে থেকে বাঁশির প্রতি আকৃষ্ট হলেন?
জালাল: আমার পরিবারের সবাই বাউল গানের সঙ্গে জড়িত। আমিও তাদের দেখাদেখি বাঁশিতে সুর তোলার চেষ্টা করতাম। একদিন বাবা বলল, ‘তুই কি বাঁশি বাজানো শিখতে চাস?’ আমি জানালাম, চাই। তারপর বাবা আমাকে একটা বাঁশি কিনে এনে দেন। তিনিই আমাকে সুর তোলা শেখালেন। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই মোটামুটি সব সুর শিখে ফেলেছিলাম।
নিউজবাংলা:কবে থেকে স্টেজে বাঁশি বাজানো শুরু?
জালাল: ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা-ভাইদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাঁশি বাজিয়েছি। তবে আমাদের পরিবারের পূর্ব পরিচিত একজন সংগীত পরিচালক ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি আমাকে ঢাকার স্মরলিপি স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে একটি গানে বাঁশি বাজানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার বাজানোর কথা ছিল তিনি কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকায় আমি এই সুযোগটা পেয়েছিলাম।
আমাকে নিয়ে অনেকের অনেক দ্বিধা ছিল, নিজেও ভয় পাচ্ছিলাম, কিন্তু আমি সফলভাবে বাজাতে পেরেছিলাম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মুনির স্যারের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ।
নিউজবাংলা: এ পর্যন্ত মোট কতটি গানে বাঁশি বাজিয়েছেন?
জালাল: বলাটা খুব কঠিন। এই হিসাব আসলে আমি নিজেও জানি না। সেই ১৯৯২ সালে শুরু করেছি, এখন ২০২১। অসংখ্য শিল্পীর গানে বাঁশির সুর দিয়েছি। সিনেমার গানে বাজিয়েছি। অনেক শিল্পীর একক গানেও বাজিয়েছি। টিভিতে যে গানের লাইভ প্রোগ্রাম হয় সেগুলোতেও বাঁশি বাজিয়েছি। তবে মোট কতটা গানে বাজিয়েছি এটা বলা সম্ভব নয়।
নিউজবাংলা: এমন কোনো শিল্পী আছে যার গানে বাঁশি বাজানোর ইচ্ছা আছে যা এখনও পূরণ হয়নি?
জালাল: জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন ভাইয়ের মা প্রয়াত নিলুফার ইয়াসমীন আন্টির যেকোনো একটা অ্যালবামের গানে বাঁশি বাজানোর খুবই ইচ্ছা ছিল। আন্টি আর আমাদের মাঝে নেই। এই আফসোসটা মনে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।
এখন আগুন ভাইয়ের কোনো একটা গানে বাঁশি বাজানোর ইচ্ছা আছে। আগুন ভাই শুধু একবার ডাক দিলেই চলে যাব।
নিউজবাংলা: এখন পর্যন্ত কোন কোন কণ্ঠশিল্পী বা সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন?
জালাল: অনেক শিল্পীর সঙ্গেই কাজ করেছি। আমাদের নওগাঁর কৃতী সন্তান গুরু জেমস ভাই, হাবিব ভাইয়ের অনেক গানেই বাজিয়েছি। ইথন বাবুর পরিচালনায় অনেক গানে বাঁশির সুর দিয়েছি। ইথুন বাবু আমার খুবই শ্রদ্ধাভাজন ও অভিভাবকতূল্য মানুষ।
নিউজবাংলা: কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আপনার প্রাপ্তি কী কী?
জালাল: বাঁশির সুরে সবার মনে স্থান করে নিতে পেরেছি, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। আমার ৪৪ বছরের জীবনে ২৯ বছর ধরে বাঁশি বাজাচ্ছি। অনেক প্রশংসা পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে। ২০১৬ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে বাঁশি বাজাতে পেরেছি। এগুলোই আমার প্রাপ্তি।
নিউজবাংলা: ভবিষ্যৎ ইচ্ছা কী?
জালাল: আমার ইচ্ছা প্রিয় জন্মস্থান নওগাঁতে নিজের এলাকায় বাবার নামে একটি বাঁশি প্রশিক্ষণ দেয়ার স্কুল খোলা। এলাকার আগ্রহীরা সেখানে বাঁশি বাজানো শিখবে। জানি না, এই ইচ্ছা পূরণ হবে কি না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এই ইচ্ছা বাস্তবায়নের।