বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কি কেটে যাচ্ছে

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২৩:৫৩

পরীক্ষার বিপরীতে করোনা রোগী শনাক্তের হার ৯-এর ঘরে নেমে এসেছে। কিন্তু করোনা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শনাক্তের হার পাঁচের নিচে না নামা পর্যন্ত বলা যাবে না, সংক্রমণের ঢেউ কেটে গেছে। এদিকে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

গত চার মাস পর দেশে এক দিনে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজারের নিচে। শনিবার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৪ জন, যা ৮৫ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এক মাস আগে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৮ শতাংশ। এক মাসে রোগী শনাক্তের হার কমে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

একদিনে পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী ৯ শতাংশ, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

মনে করা হয়, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে গত মার্চ থেকে। তখন বিশেষত সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী কয়েক মাস এটির দ্রুত বিস্তার ঘটে, যা দেশজুড়ে শঙ্কা ও চিকিৎসা সংকট তৈরি করে।

তবে পাঁচ মাস পর পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে। গত এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে কমছে শনাক্তের হার।

গত জুলাই মাসে দ্বিতীয় ঢেউ তার চূড়া স্পর্শ করে। তখন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা এখন ৯ শতাংশের ঘরে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেয়া লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন আড়াই শর বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এ ছাড়া করোনা উপসর্গে মারা গেছেন আরও বহু জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৬০-এর ঘরে নেমে এসেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, দেশে কি অন্য দেশেগুলোর মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তৃতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা রয়েছে।

কেউ কেউ বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার আশঙ্কা কিছুটা কম।

এরই মধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ও দেশের বিমানবন্দরগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

দেশে এখন রোগী শনাক্তের যে হার, তাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে, এটা বলা যাবে না। টানা তিন সপ্তাহ যদি পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যায়। সে ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন ন্যূনতম ২০ হাজার লোকের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে এবং দেশের সব জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

দেশে এখন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে ১৭ হাজারের মতো, যা এক মাস আগেও ছিল ৫০ হাজারে বেশি। এক মাসের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজারের অধিক।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ এলে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে আসার কথা। এখনও শনাক্তের হার ৯ শতাংশের ঘরে। যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে অবশ্যই আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সম্ভব হবো।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ক্ষেত্রে আমরা দেখছি সংক্রমণের ধারাটা একটু নিম্নগামী। করোনা যা পরীক্ষা হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের নিচে শনাক্ত হচ্ছে। তবে এখনই আমরা বলতে পারব না, এটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সংক্রমণ যখন ৫ শতাংশের নিচে আসবে এবং এটা যদি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত একইভাবে চলে, তাহলে আমরা বলতে পারি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

‘তবে আশঙ্কার বিষয়টা অন্য জায়গায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের এখনও দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আমার মনে করছি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসবে। নিয়ন্ত্রণে আসার চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরে আবার কিন্তু নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকে।

‘৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পরে যদি আবার সংক্রমণ বাড়ে তখন এটিকে আমরা আবার তৃতীয় ঢেউ বলব। ভারতেও আসার শঙ্কা রয়েছে। এটা বাংলাদেশেও আসতে পারে, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে একেবারে উদাসীন হয়ে যাই, তাহলে কিন্তু আবার দেশে দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেবে। এ কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণে আবার অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

এরই মধ্যে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আমল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ আমরা সফলভাবে সামলে নিয়েছিলাম। মানুষের স্বাস্থ্যবিধিতে ব্যাপক অনীহা ও অবহেলার কারণে দেশে করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। এখন দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা কমে যাচ্ছে। তবে প্রথম ঢেউয়ের পর যেভাবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদাসীন হয়েছিল, সেটা আবার ঘটতে দিলে খুব দ্রুতই দেশে তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টিকে ‘অনেকটা আপেক্ষিক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এ প্রসঙ্গে নিজের যুক্তি তুলে ধরে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, কারণ তারা শুরুতেই কঠোর লকডাউনে ছিল। যখন লকডাউন খুলে দেয়া হলো, তখন সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে। ওখানে ভাইরাস পরিবর্তনের কারণে এটা হতে পারে। আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।

‘করোনাভাইরাসের প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউ – পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর।’

সেব্রিনা বলেন, ‘যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, সংক্রমণের হার অব্যাহত থাকবে। নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, শুরুর দিকে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন সংক্রমণ অনেক কম ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে অবশ্যই আবার সংক্রমণ বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর