বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রলীগের আধিপত্য বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (বিদ্রোহী অংশ) আয়োজিত ‘সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন?’ শীর্ষক সর্বজন শুনানিতে শনিবার তিনি এ দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা।
ছাত্রলীগকে ইঙ্গিত করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, মাস্তান বাহিনীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই বাহিনী সরলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা ঠিকই পড়াশোনা করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণরুম এই সরকারের ছাত্রসংগঠনের কারণে হয়েছে।’
তারুণ্যের কন্ঠস্বরকে বর্তমান সরকার ভয় পায় দাবি করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণার পর এই আলোচনার প্রয়োজন থাকত না, যদি শিক্ষামন্ত্রীর কথার ওপর কারো বিশ্বাস থাকত।
‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরা খুলার সিদ্ধান্ত নেবেন, কিন্তু আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই মেরুদণ্ড অনেক আগেই হারিয়েছে। প্রকাশ্যে না, কানে কানে যেটা বলা হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই অনুযায়ী কাজ করবে। যেকোনো সঙ্কট বিভিন্ন গোপন বিষয়ের স্বরূপ উন্মোচন করে। এই করোনা আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের স্বরূপ উন্মোচন করেছে।’
আনু মুহাম্মদ জানান, করোনার কারণে অনেক শিক্ষক তার পেশা পরিবর্তন করেছেন, শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রমে যুক্ত হয়েছে। যাদের সন্তানরা দেশে পড়াশোনা করছে না তারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে।
‘তারুণ্য, তরুণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বরকে সরকার ভয় পায় বলেই তারা যতদিন পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ এবং কোনো ধানাই-পানাই না করে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানাই।’- যোগ করেন আনু মোহাম্মদ।
সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা কী; অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদতে কী হচ্ছে; ইউনিসেফ-ইউনেস্কোর ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব শেষে বন্ধ, সবার আগে খোলা’ নীতি বাস্তবায়নে অনীহা কেন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বেতন ও সেশন ফি নেয়ার হেতু কী ও শতভাগ টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপ আদৌ সরকারের আছে কি; এসব প্রশ্ন সামনে রেখে এই সর্বজন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (বিদ্রোহী অংশ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজির আমিন জয়। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম এই আয়োজনের সঞ্চালনা করেন।
শুনানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দীন খান, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহাসহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।