বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সবাই যাদের তাড়ায়, তাদের সেবায় তারা

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:০০

‘এখন পর্যন্ত আমরা এ রকম ৮-১০ জন মানুষকে সেবা দিয়েছি। আজগর কাকা নিজেই তাদের চুল-দাড়ি কেটে দেয়ার কাজ করেন। আর যথাসম্ভব চেষ্টা করি তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছায়ে দেয়ার জন্য কিন্তু আমরা এখনও তা পারি নাই। কারণ তারা পরিবারের ঠিকানা বলতে পারে না।’

রাস্তার পাশেই তাদের বসবাস। অভুক্ত, অগোছালো ও নোংরা পোশাকে ঘুরে বেড়ান সারা দিন। তাদের দেখেও এড়িয়ে যান অনেকে।

ঢাকার সাভারের একটি এলাকায় ভাসমান এই মানুষগুলোর জন্য কাজ করছে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন কালচারাল অর্গানাইজেশন। ইউনিয়নের যাদুরচর মাদ্রাসা রোড এলাকায় একটি কার্যালয়ও রয়েছে এই সংগঠনের।

ছিন্নমূল মানুষগুলোকে নিয়মিত গোসল করান সংগঠনের সদস্যরা। কেটে দেন তাদের চুল ও দাড়ি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা শেষে তাদের দেয়া হয় ভালো মানের খাবারও।

সংগঠনটির সহসভাপতি যাদুরচর এলাকার মোবারক হোসেন জয় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের আজীবন সদস্য আজগর আলী কাকা। তিন-চার বছর আগে প্রবাস থেকে দেশে ফেরেন। তিনিই প্রথম চিন্তা করেন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর জন্য কিছু করা যায় কি না। রাস্তাঘাটে ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের পেছন পেছন দৌড়াদৌড়ি করে। ইট মারে, ঢিল মারে। আবার কিছু কিছু মানুষ ভয় পায় তাদের। এটা ওনার চোখে পড়ে।

‘পরে মিটিং করে আমরা ঠিক করি, ভাসমান লোকদের নিয়ে কাজ করব। উনি মূল দায়িত্ব নিয়ে আমাদের তিন সদস্যকে ওনার সঙ্গে কাজে নিয়ে নেন।’

সংগঠনটির কাজ পরিচালনার বিষয়ে মোবারক বলেন, ‘যাদের চুল, দাড়ি অনেক বড়, কাপড়-চোপড় খুব নোংরা, এমন মানুষদের ধইরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কইরা দেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানসিক সমস্যার কারণে বেশির ভাগ লোক কথাবার্তা সেভাবে বলতে পারে না। তবে চেষ্টা করা হয় এ কাজে তাদের সম্মতি নেয়ার। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগই ইতিবাচক সায় দেন। আর যারা একেবারেই কথা বলতে চান না, তাদের বেলায় আশপাশের লোকজনরে আমরা জিজ্ঞেস করি। তারা যদি সায় দেন, তখন আমরা তাদের যত্ন করে থাকি।

‘এখন পর্যন্ত আমরা এ রকম ৮-১০ জন মানুষকে সেবা দিয়েছি। আজগর কাকা নিজেই তাদের চুল-দাড়ি কেটে দেয়ার কাজ করেন। আর যথাসম্ভব চেষ্টা করি তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছায়ে দেয়ার জন্য কিন্তু আমরা এখনও তা পারি নাই। কারণ তারা পরিবারের ঠিকানা বলতে পারে না।’

সংগঠনের সভাপতি শামীম হোসেন বলেন, ‘শুরুর দিকে আমরা পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছি। আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর ও এলাকার বড় ভাইরা টাকা দিত। পরে আমরা খেলার আয়োজন শুরু করি। এ ছাড়া খাদ্যসহায়তা, বস্ত্র বিতরণ ও অসুস্থদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি। কারও চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার হলে এলাকার বিত্তবানদের কাছ থেকে ফান্ড কালেক্ট করে দেই। আর অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মুমূর্ষুদের জন্য রক্তদান কর্মসূচি আমাদের নিয়মিত কাজ।

‘এখন ক্লাবের ৪১ সদস্যের কার্যকর কমিটি আছে। তবে তাদের মধ্যে ২৭ জন সব সময় অ্যাকটিভ থাকে। যেকোনো সময় তাদের ডাকলেই পাওয়া যাবে। আমাদের প্রায় সব সদস্যই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তবে আমরা এখনও স্থায়ী জায়গা পাইনি। এলজিইডির অর্থায়নে আমাদের ক্লাবঘর করে দেয়া হয়েছে। এটাও চেয়ারম্যান সমর ভাইয়ের সহযোগিতায় পেয়েছি।’

যাদুরচর এলাকার পারভেজ হাসান বলেন, ‘কয়েক মাস হলো দেখছি, ওরা রাস্তা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীনদের ধরে এনে তাদের গোসল করাচ্ছে। তাদের দেখাদেখি অন্যরা এগিয়ে আসছে। ঢিল ছোড়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেকে। এসব সম্ভব হয়েছে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কারণে।’

তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্লাবটা গড়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যুব বা ছাত্র সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা। সেই সঙ্গে তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। আমার স্বপ্ন তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের প্রতিটা ওয়ার্ডে এই ধরনের ক্লাব গড়ে তোলা।’

এ বিভাগের আরো খবর