প্রায় চার মাস পর ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগের বাধা কাটছে। রোববার থেকে দেশটির সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
শনিবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বেবিচকের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।
এদিকে এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে সম্মতি দেয় বেবিচক।
২৮ আগস্ট বেবিচককে দেয়া ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় ফ্লাইট শুরুর প্রস্তাব দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার চিঠির জবাব দেয় বাংলাদেশ। এতে সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে ১৪টি ফ্লাইট চলাচলে দিল্লির প্রস্তাবে সম্মতি জানায় ঢাকা।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দিল্লি রুটে সপ্তাহে দুটি এবং কলকাতা রুটে দুটি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলাকে দেয়া হয়েছে চেন্নাই রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট। আরেক বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ার কোনো ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ পায়নি।
একই সঙ্গে সপ্তাহে প্রত্যেক দেশের বিমান সংস্থাগুলো ১০টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে কি না, তাও বিবেচনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
বেবিচকের চিঠিতে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়া সত্ত্বেও ভারত থেকে আসা কোনো যাত্রীকে বাধ্যতামুলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পাশাপাশি এয়ারলাইনসগুলো তাদের উড়োজাহাজের আসন সংখ্যার সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিমান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর থেকেই কলকাতা রুটে ফ্লাইট শুরু করবে তারা। প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার এ রুটে চলবে ফ্লাইট। অন্যদিকে দিল্লি রুটে বিমানের ফ্লাইইট শুরু হবে ৮ সেপ্টেম্বর। এ রুটে ফ্লাইট চলবে প্রতি রবি ও বুধবার।
বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস জানিয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাই রুটে ফ্লাইট শুরু করবে তারা। প্রতি রবি, বুধ ও শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট।
গত ২৮ আগস্ট বেবিচককে ভারত যে চিঠি দেয়, তাতে ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলোকে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট স্লট বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছিল। এতে স্পাইস জেটকে সপ্তাহে তিনটি, ইন্ডিগো এয়ারকে দুটি এবং এয়ার ইন্ডিয়াকে দুটি করে ফ্লাইট বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।
এর আগে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করতে গত ৪ আগস্ট বেবিচক সে দেশের কর্তৃপক্ষকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে ভ্রমণকারীদের করোনা টিকার দুটি ডোজ নেয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসাপ্রত্যাশী, শিক্ষার্থী ও তৃতীয় দেশে যেতে ভিসা গ্রহণের উদ্দেশে ভ্রমণকারী এবং এমপ্লয়মেন্ট ভিসাধারীদের জন্য ভ্রমণের সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সে চিঠিতে।
দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত ১৪ এপ্রিল বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ১৬ দিন বন্ধ থাকার পর ১ মে থেকে ১২টি দেশ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে আকাশপথ খুলে দেয়া হয়। এই ১২টি দেশের মধ্যে ছিল ভারত।
পরে বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশের তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হলেও ভারতের সঙ্গে আকাশপথ বন্ধই থাকে।
বেবিচক গত ৫ জুলাই থেকে ভারতসহ ৮টি দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ। তারপর গত বছরের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
সম্প্রতি ভারতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল শুরুর বিষয়ে আগ্রহ দেখায় তারা। সে জন্য বাংলাদেশ সরকারকে একটি প্রস্তাবও দেয়া হয় দিল্লির পক্ষ থেকে।
দেশি তিন এয়ারলাইনস বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার ছাড়াও ভারতের বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট চালিয়ে থাকে। ভারতের এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া, ইনডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা ও গোএয়ার।