বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউনানি লাইসেন্সের আড়ালে নকল ওষুধ

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:৩৫

দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, এমন সব কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। ক্যানসারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় কার্যকর হিসেবে দাবি করা হয়, এমন ওষুধও নকল করছে তারা।

ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স রয়েছে ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের। নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদনের কথা তাদের। তা না করে বৈধ কারখানায় নকল ওষুধ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি।

এমন অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, এমন সব কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্যানসারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় কার্যকর হিসেবে দাবি করা হয়, এমন ওষুধও নকল করছে তারা।

চিকিৎসকরা নির্ধারিত রোগের জন্য যথাযথ ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেও আসল-নকল চিনতে না পারায় ফার্মেসি থেকে এসব পণ্য কিনে ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ। সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশি অসুস্থ হচ্ছেন তারা।

নকল ওষুধ প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান পরিচালনা করছে ডিবির একাধিক দল। গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাজলা, আরামবাগ ও মিটফোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির লালবাগ বিভাগ।

বেসিক ইউনানি, হাকিম রাজ্জাক ও সেফ ইউনানি নামে তিনটি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে নকল করে বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-কোতোয়ালি) সাইফুর রহমান আজাদ।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ইউনানি প্রতিষ্ঠানের কারখানায় নকল ওষুধ তৈরির অপরাধে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা করছি।’

নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার বিষয়ে ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মার্কেটে তাদের উৎপাদিত ইউনানি ওষুধগুলো মার্কেটে না চললেও তারা লাইসেন্স নেয়। নির্ধারিত ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের জন্য যেসব মেশিন স্থাপন করার কথা, সেগুলোর পাশাপাশি ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল তৈরির মেশিনও স্থাপন করে।

‘ইউনানি ওষুধ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কাঁচামাল কেনার অনুমতি পায়। বৈধভাবে এসব কাঁচামাল কিনে অবৈধ কাজটা করে। বাজারে সর্বাধিক প্রচলিত ওষুধগুলো এসব ইউনানি কারখানায় উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়।’

ইউনানি ওষুধের কারখানা স্থাপন, উৎপাদন ও পরবর্তী সময়ে তাদের পণ্যের বাজার বিশ্লেষণ করে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ইউনানির ওষুধ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা মূল্যের মেশিন স্থাপন, লাখ লাখ টাকা অফিস ব্যয় নির্বাহ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারে খুব একটা বিক্রি হয় না। তারা বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে নকল ওষুধ উৎপাদন করে আসছে। তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে।

গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইউনানি প্রতিষ্ঠানগুলো নকল ওষুধ উৎপাদনের পর কোনোভাবেই নিজেদের কাছে স্টক রাখে না বলে জানিয়েছেন ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাভার, পিরোজপুর, বগুড়া ও কুমিল্লায় অনেক ইউনানি কারখানা আছে। তারা নকল ওষুধগুলো উৎপাদনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মার্কেটে ছেড়ে দেয়। নিজেদের কাছে স্টক রাখে না। স্টক রাখলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে।’

সাভার, পিরোজপুর, বগুড়া ও কুমিল্লায় বেশ কিছু ইউনানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। দুটি বড় চক্রের ১৫ জন সদস্যকে আমরা পৃথক দুটি অভিযানে গ্রেপ্তার করেছি, যারা নকল ওষুধ উৎপাদন করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

‘এরা নামিদামি কোম্পানিগুলোর বহুল প্রচলিত ওষুধগুলো নকল করে আসছিল। নকল ওষুধ প্রস্তুতে আরও কারা কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি।’

ইউনানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যারা মনিটর করে, তাদের নজরে আনা হচ্ছে বলে জানান ডিবি লাগবাগ বিভাগের এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপর লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান নিবে। আমরা সময়ে সময়ে সেগুলো জানাচ্ছি।’

সম্প্রতি নকল ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব ইউনানি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আছে, তাদের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের কারখানায় নকল ওষুধ তৈরির প্রবণতা রয়েছে। তাদের ইন্সপেকশন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

‘নকল ওষুধ বন্ধে আমরা যেন কঠোর ব্যবস্থা নেই, সেই নির্দেশনা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’

নকল ওষুধ প্রস্তুতকারক ধরিয়ে দিতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

নকল ওষুধ কতটা ভয়াবহ

নকল ওষুধের ভয়াবহতা নিয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জয় চৌধুরী বলেন, ‘নকল ওষুধ ব্যবহারে হৃৎপিণ্ড, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে এ ধরনের ওষুধ। নকল অ্যান্টিবায়োটিক খেলে পরবর্তী সময়ে আসল অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে কাজ করে না।’

জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. বেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজারে যে ওষুধগুলো সব থেকে বেশি চলে, সে ওষুধগুলো নকল করে চক্রটি। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো যেসব নীতিমালা ও প্রক্রিয়া মেনে ওষুধ তৈরি করে, নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকরা এর কিছুই মানে না। এ ছাড়া তারা কোনো কেমিস্ট এবং ফার্মাসিস্টও নিয়োগ দেয় বলে আমার মনে হয় না।’

নকল ওষুধ চেনার উপায় কী

নকল ওষুধ কীভাবে চেনা যাবে জানতে চাইলে জেনিথের এমডি বেলাল বলেন, ‘নকল ওষুধ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা সাধারণ ক্রেতাদের চেনার কোনো উপায় নাই। তবে প্রকৃত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আসল আর নকল ওষুধের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবে। ওষুধের প্যাকেটের সিকিউরিটি হলোগ্রামও নকল করছে চক্রটি।’

তিনি বলেন, ‘পিল বা বড়ির ক্ষেত্রে আসলটি অনেক শক্ত হয়। আর নকল বড়ি নরম হয়। ওষুধের ভেতর রঙের পার্থক্যও থাকে।’

ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়ে নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা জানতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর