করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল কক্সবাজারে। নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটকদের আগমনে ধীরে ধীরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে সৈকতে।
কখনো রোদ, আবার কখনো কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। এই আবহাওয়াতেই সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আকাশের সঙ্গে সাগরের মিতালি দেখতে আসছেন পর্যটকরা।
সুগন্ধা পয়েন্টে পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাঁটছিলেন রাজধানীর মিরপুর থেকে বেড়াতে আসা উস্মিতা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে কক্সবাজার সৈকতকে অনেক মিস করেছি। তাই ছুটির দিনে ফ্যামেলিকে নিয়ে প্রাণের কক্সবাজার ঘুরতে আসা। এসে খুব ভালো লাগছে। আরও দুই-তিন দিন থাকব।’
আরেক পর্যটক ইমতিয়াজ বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার খবর পেয়েই কক্সবাজারে ছুটে আসা।’
সামিয়া জান্নাত নামের আরেক পর্যটক বলেন, ‘সুযোগ হলেই বছরে অন্তত একবার কক্সবাজারে আসা হতো। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর আসতে পারিনি। এবার পর্যটন স্পট খুলে দেয়ার কথা শোনামাত্রই প্ল্যান করে কক্সবাজারের ছুটে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এসেছি। এবার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে দেখব। রামু বৌদ্ধ বিহার, মেরিন ড্রাইভ, গোয়ালিয়াসহ আরও কয়েকটি জায়গায় যাবো ভেবেছি।’
দীর্ঘদিন পর কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়ায় সৈকতে বাড়ছে পর্যটকদের চাপ। ছবি: নিউজবাংলা
পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ভিড় করছেন সৈকতে। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, ছবি তোলাসহ আনন্দমুখর সময় পার করছেন তারা।
কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান এলাকা থেকে সৈকতে বেড়াতে আসা মুমতাহিনা বলেন, ‘কলেজ বন্ধ, তেমন পড়াশোনার চাপ নেই। ঘরে বসে থেকে ভালো লাগছিল না। তাই ফ্যামেলির সঙ্গে অনেক দিন পর সৈকতে ঘুরতে এসেছি।’
করোনা সংক্রমণ রোধে সৈকতে প্রবেশে প্রায় পাঁচ মাস ধরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। একই সঙ্গে বন্ধ ছিল সব পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, বার্মিজ দোকানসহ সব ধরনের পর্যটন ব্যবসা।
দীর্ঘদিন পর কক্সবাজার খুলে দেয়ায় আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরাও।
পর্যটন ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, লকডাউনের কারণে দোকানের প্রায় অর্ধেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাই।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম বলেন, ‘হোটেল ব্যবসা নির্ভর কক্সবাজারে ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার ছিল দীর্ঘদিন। এখন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় সবার মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন ভাবে পথচলা শুরু করেছে হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পৌর এলাকার সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় কর্মচাঞ্চল্য বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মাঝেও। ছবি: নিউজবাংলা
তবে সৈকত ভ্রমণে আসা বেশিরভাগ পর্যটক স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকেই। নির্দেশনা থাকার পরেও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানান, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রায় কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। তাদের কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে পর্যটনশিল্প খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে, শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই পর্যটন শিল্পে বজায় রাখতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে মাস্ক, না হলে গুনতে হবে জরিমানা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে প্রশাসনের নির্দেশনা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি, কর্মপন্থা ও গাইড লাইন সরবরাহ করা হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মতে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলি, কবিতা চত্বর, ইনানী ও পাটুয়ারটেকসহ সব পয়েন্টে পুলিশের টিম কাজ করছে।
‘জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় কাজ করছে তিনটি মোবাইল টিম। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সৈকতে নামতে হলে নিরাপদ দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারণায় চলছে টিমওয়ার্ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব কার্যক্রমে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টিম।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আসার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানান এসপি।