ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝের নয়খালে ২২ বছর আগে নির্মাণ করা একটি সেতু ধসে পড়ল ব্যবহার হওয়ার আগেই। প্রায় দুই যুগেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসেনি স্থাপনাটি। জনগণের করের টাকা পানিতে গেল পুরোপুরি।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ইটবোঝাই একটি নৌকা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিলে ধসে পড়ে সেটি। সেতুটি নৌকার ওপর ভেঙে পড়ায় সেটি ডুবে গেলেও মাঝি ও তার সহকারীরা অক্ষত আছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা পরিষদের তহবিলে ১৯৯৯ সালে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও আট ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
সেতুটি নির্মাণের পর দেশে দায়িত্ব পালন শেষ করেছে মোট পাঁচটি সরকার। আরও একটি সরকার তার মেয়াদের অর্ধেক পূরণ করে ফেলেছে। এই পাঁচটি সরকারের কেউ সেতুটিকে ব্যবহারের উপযোগী করতে সড়ক নির্মাণ করতে পারেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ব্যবহারের আগেই ধসে পড়া সেতু। ছবি: নিউজবাংলা
বনগজ-কৃষ্ণনগর এবং একই উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা ও বরিশল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলে সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তবে দুই দশক পেরিয়ে গেলেও কোনো সংযোগ সড়ক হয়নি। সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগই তাদের চোখে পড়েনি।
সে সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে বিএনপি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর ২০০৯ থেকে দুই মেয়াদ শেষ করে তৃতীয় মেয়াদের অর্ধেক শেষ করেছে আবার আওয়ামী লীগ।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা এখন বলছেন, তারা সংযোগ সড়ক নির্মাণের একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রস্তাবও তৈরি করেছেন। কিন্তু সেটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি।
বনগজ গ্রামের কামরুজ্জামান লালু বলেন, ‘দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় সেতুটি আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। আজ সকালে ইটবোঝাই নৌকাটি পিলারে ধাক্কা দিলে সেতুটি ভেঙে পড়ে। তবে মাঝি ও সহযোগীদের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল। সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল গ্রামের মানুষের সুফলের আশায়, কিন্তু ২২ বছর ধরে সুফল কী জিনিস তা আর দেখা গেল না।
‘ভেবেছিলাম সেতুটি যখন হয়েছে সড়ক হবে; রোগী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন যাতায়াতে সুবিধা পাবে, কিন্তু তা আর হলো না।’
এলজিইডির আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, সেতুটি ভেঙে পড়ার তথ্য পেয়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে কারণ উদ্ঘাটন করা হবে।
সংযোগ সড়কের বিষয়ে তিনি জানান, কৃষ্ণনগর গ্রামে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বৃহত্তর কুমিল্লা প্রকল্পের (জিসিপি-৪) আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সেটি অনুমোদন হলে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যেত।’