নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভায় লক্ষীপাশা কলকাকলি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৯৬ সালে। তবে প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পরও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের আওতায় আসেনি।
২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে মেধা তালিকায় প্রথমও হয় বিদ্যালয়টি। এরপরও ২০১৩ সালে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা থেকে বাদ পড়ে এটি।
বিদ্যালয়সংশ্লিষ্টদের দাবি, ২০১৩ সালের ওই তালিকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে তিন ধাপে জাতীয়করণ করার কথা। কলকাকলি বিদ্যালয়টিকে তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণ করার জন্য আবেদন করা হয়। তবে তালিকা ঘোষণার পর বিদ্যালয়টির নাম বাদ পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, সব শর্ত পূরণ করার পরও তালিকা থেকে বিদ্যালয়টির নাম বাদ পড়েছে। মাঠপর্যায় থেকে ঠিকমতো তথ্য পাঠানো না হওয়ার কারণে এটি হতে পারে।
২০১৩ সালের তালিকা থেকে বাদ পড়লেও ২০১৮ সালে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ করা ৫৬০টি বিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে লক্ষীপাশা কলকাকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কার্যত কোনো উন্নতি হয়নি। সুপারিশেই আটকে আছে জাতীয়করণ।
বিদ্যালয়টি অবিলম্বে জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর।
তিনি জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮৫ সালে। তখন প্রি-ক্যাডেট স্কুল হিসেবে চালু ছিল এটি। ১৯৯৫ সালে ১ জানুয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু করার আবেদন করা হয়। ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, ২৭ মে ২০১২ সালের আগে স্থাপন ও চালুর অনুমতির জন্য আবেদন করা বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি বিদ্যালয়টির নাম জাতীয়করণের জন্য জেলা যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠায়।
২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের (বিদ্যালয়) কাছে পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি উপসচিবের স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসকের কাছে বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
একই বছরের ২৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে জাতীয়করণের জন্য বিদ্যালয়ের বাস্তব প্রতিবেদন পাঠান। তবে জাতীয়করণের তালিকা থেকে বিদ্যালয়টির নাম বাদ পড়ে।
প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘জাতীয়করণের সব শর্ত পূরণ করা বিদ্যালয়টি কেন জাতীয়করণ হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ২০১২ সালের আগে স্থাপন। ২০১২ সালের সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর জমি হস্তান্তর করা।
‘সবগুলো শর্ত পূরণের পাশাপাশি ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ের মেধা তালিকায় প্রথম হয় বিদ্যালয়টি। তারপরও তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণ জানা নেই।’
তিনি জানান, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা ওই তালিকায় বাদ পড়ে দেশের ৪ হাজার ১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৮ সালে আন্দোলন ও অনশনের পর শিক্ষাসচিব আশ্বাস দিয়েছিলেন, এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণ হবে, তবে অপেক্ষা করতে হবে।
একই বছর সংসদীয় কমিটি ৫৬০টি বিদ্যালয়ের বিষয়ে সুপারিশ করে। সেই তালিকায় লক্ষীপাশা কলকাকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে। তবে এরপর আর বিষয়টি এগোয়নি।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৮০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা দিচ্ছেন চারজন শিক্ষক। করোনা মহামারিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে আমরা খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি।’
নড়াইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান খান জানান, কলকাকলি বিদ্যালয়ের জাতীয়করণের আবেদনের সময় তিনি এ উপজেলায় দায়িত্বে ছিলেন না। তিনি ২০১৯ সালে নড়াইলে আসেন।
তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে সরকার থেকে তাদের কাছে একটি নির্দেশনা যায়, আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় আপাতত জাতীয়করণ করা হবে না। সেই নির্দেশনার পর এ ধরনের সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
নড়াইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, তিনি ২০২০ সালে নড়াইলে এসেছেন। ওই স্কুলের জাতীয়করণের বিষয়ে কিছু জানেন না। বর্তমানে জাতীয়করণের কোনো কার্যক্রম না থাকায় এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।