বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লভ্যাংশ ১.৭৫ টাকা, দাম কমল ২ টাকা ৩০ পয়সা

  •    
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:৫৫

নগদ লভ্যাংশে শেয়ারের দাম সমন্বয় হওয়ার কথা না থাকলেও দেশের পুঁজিবাজারে এই প্রবণতা আছে। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ দাম সমন্বয় না করলেও রেকর্ড ডেটের পর শেয়ার মূল্য কমে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন নগদ লভ্যাংশ নেয়া বিনিয়োগকারীরা।

দেশের পুঁজিবাজারে একটি প্রবণতা আছে, যে কারণে নগদ লভ্যাংশে বিনিয়োগকারীদের আসলে লাভ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্টো ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

এনএলআই মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের বিনিয়োগকারীরা এবার ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ পেয়েছেন ১ টাকা ৭৫ পয়সা। কিন্তু লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পর প্রথম দিন দাম কমে ১ টাকা ৭০ পয়সা, এরপরদিন আরও ৭০ পয়সা। তৃতীয় দিনে এসে ১০ পয়সা বাড়ার পর মোট কমেছে ২ টাকা ৩০ পয়সা।

অর্থাৎ যারা এই লভ্যাংশ নিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি ৫৫ পয়সা লোকসানে আছেন।

অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি যে আয়, তা গত ৩০ জুনের আর্থিক হিসাব। রেকর্ড ডেটের আগে ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য বা মৌলভিত্তি ছিল, সেটি লভ্যাংশ দেয়ার পর কোনো হেরফের হয়নি।

৩০ জুনের পর পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৭৬২ পয়েন্ট। ফলে এই সময়ে এই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় বেড়েছে, এটা ধরাই যায়। আর এই সময়ে সম্পদমূল্য বেড়েছে মোট ৬২ পয়সা।

পুঁজিবাজারের লভ্যাংশ দুই প্রকার। বোনাস ও নগদে বিতরণ করা হয়। মিউচ্যুয়াল ফান্ড কয়েক বছর আগে রিইনভেস্টমেন্ট ইউনিট দিতে পারলেও ২০১৯ সাল থেকে কেবল নগদে বিতরণের নির্দেশ আসে।

শেয়ারের ক্ষেত্রে বোনাস যতটুকু বিতরণ করা হয়, দামের সঙ্গে ততটুকু সমন্বয় হয়। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ সমন্বয় হয় না।

যেমন মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এবার শেয়ার প্রতি ১ টাকা নগদ আর ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে ব্যাংকটি। রেকর্ড ডেটে দাম ছিল ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারের সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্নির্ধারণ করা দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৭০ পয়সা।

কিন্তু রেকর্ড ডেটের পর ১ টাকা নগদ লভ্যাংশও কার্যত সমন্বয় হয়ে যায় এ কারণে যে, শেয়ার মূল্য কমে ১১ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে আসে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত হলেও অন্য কোম্পানির শেয়ার মূল্যের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কেটে নেয়া হয়। আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর টিআইএন থাকলে কর কাটে ১০ শতাংশ, না কাটলে কাটে ১৫ শতাংশ।

প্রায়ই দেখা যায়, নগদ লভ্যাংশের পুরোটাই বা এর চেয়ে বেশি সমন্বয় হয়ে গেছে। করের হিসাব ধরলে প্রকৃত লোকসান হয় আরও বেশি।।

গ্রিনডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে দাম কমেনি অতটা। দুটি ফান্ডই ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। রেকর্ড ডেটের পর দাম কমে গেছে ৯০ পয়সা। ফলে ইউনিটধারীদের মুনাফা হয়েছে কার্যত ৩০ পয়সা।

এর আগে এনসিসি ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ দিয়েছে সাড়ে ৭২ পয়সা। রেকর্ড ডেটের দিন দাম ছিল ৯ টাকা। যারা লভ্যাংশ নিয়েছেন, রেকর্ড ডেটের পর দিন দাম কমে যায় ১ টাকা ৩০ পয়সা। পরে ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে আরও ১ টাকা ৬০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৬ টাকা ১০ পয়সা। পরে দাম বাড়লেও লভ্যাংশ নেয়ার পর লোকসান হয়েছে ব্যাপক।

রেকর্ড ডেট শেষে আগামী রোববার আরও তিনটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন শুরু হবে। এগুলো হলো: এসএমইএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, এসএমইএল আইবিবিএল শরিয়া ফান্ড, এবং এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এর মধ্যে এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ও এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড ইউনিটধারীদেরকে দেড় টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আর এসএমইএল আইবিবিএল শরিয়া ফান্ড দেবে ১ টাকা।

এর মধ্যে গ্রোথ ফান্ডের দর রেকর্ড ডেটে ছিল ১২ টাকা ২০ পয়সা। লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের দর ছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা আর শরিয়া ফান্ডের দর ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা।

আগের তিনটি ফান্ডের নগদ লভ্যাংশ কার্যত সমন্বয় হয়ে যাওয়ায় এই তিনটি ফান্ডের ইউনিটধারীরা রেকর্ড ডেটের পর দাম কমে যায় কি না, এ নিয়ে উদ্বেগে আছেন।

নগদ লভ্যাংশে কেন দাম কমবে

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা নগদ লভ্যাংশও কার্যত সমন্বয় হয়ে যাওয়াকে পুঁজিবাজারের কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন।

তারা বলছেন, নগদ লভ্যাংশের মাধ্যমে কোম্পানি মূলত বিগত বছরের যে আয় তা থেকে বিরতণ করে থাকে। ফলে এখানে বিদ্যমান সময়ে আয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে নগদ লভ্যাংশ সমন্বয়ের কোনো যুক্তি নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই সব পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারধারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। কিন্ত সেগুলোর দাম কি এখন বাড়ছে? বরং পুঁজিবাজারে দুর্বল প্রকৃতির প্রতিষ্ঠানগুলোর দরই এখন সকলের নজরে। এর একটি কারণ হতে পারে নগদ লভ্যাংশের পরও দাম কমে যাওয়া। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা বোনাস লভ্যাংশে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বেশি।’

পুঁজিবাজারের আরেক বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে সেগুলো অবশ্যই বোনাস শেয়ার দেয়া কোম্পানির তুলনায় ভালো। মূলত কোম্পানি এক বছরে কী ব্যবসা করেছে তার প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় নগদ লভ্যাংশের মাধ্যমে।’

তাহলে নগদ লভ্যাংশের পর দাম পড়ে যাচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো ডিএসই বা সিএসই সমন্বয় করে না। শেয়ার দর কমে মূলত সেই কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণে। বিনিয়োগকারীদের ডে ট্রেডিং থেকে বের করে আনা গেলেই হয়তো এ ধরনের অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর