অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা লেবাবন থেকে দেশে ফিরে আসতে চাইছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএমও জানতে পেরেছে, এদের প্রতি দুই জনের একজনই দেশটি ছাড়তে মরিয়া।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের সহায়তায় একই দিন সকালে ১৮ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
আইএমও জানিয়েছে, লেবাননে অভিবাসী শ্রমিকরা নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত আয় করতে পারছেন না। এছাড়া পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছেন না।
লেবাননে থাকা এক হাজারের বেশি অভিবাসীর ওপর এই জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমও বলছে, দেশটির রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের পর সরকারের পদত্যাগের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় লেবাননের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে। এ কারণে বাংলাদেশিরা ফিরে আসতে চাইছেন।
শ্রমিকদের ভ্রমণপূর্ব পরিবহন সহায়তা এবং মনোসামাজিক সেবার পাশাপাশি সুরক্ষামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করে আইওএম। দেশে পৌঁছানোর পর তাদের বাড়ি ফেরার খরচসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া হয়।
আই্ওএম জানিয়েছে, লেবাননে চলমান সংকটের প্রভাবে অনেকেই চাকরি এবং জীবিকা হারিয়েছেন। বেতন না দেয়া, অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করা এবং চুক্তি লঙ্ঘনের মতো শোষণমূলক আচরণ করছেন নিয়োগকর্তারা। ফলে অভিবাসীরা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
সংস্থাটির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লেবাননে বসবাস খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। দেশে থাকা পরিবারকেও কোনো ধরনের সহায়তা করতে পারছে না।
আইওএমের লেবানন প্রধান ম্যাথিউ লুসিয়ানো বলেন, ‘অনেক অভিবাসী সহায়তার জন্য আসছেন। তারা চাকরি হারিয়েছেন, অভিবাসীরা ক্ষুধার্ত। তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। তারা অনিরাপদ বোধ করছেন।
‘অনেকে দেশ ফেরার জন্য মরিয়া, কিন্তু কোনো উপায় পাচ্ছেন না। দ্রুত জরুরি সহায়তা জোরদার করার পাশাপাশি স্বেচ্ছায় মানবিক প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার।’
সংস্থাটির বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারি যুক্ত হয়ে লেবাননে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীদের কষ্ট আরও বহুগুণে বাড়িয়েছে। অসহায় অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের একসঙ্গে করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার, দাতা সংস্থা এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাব।’
এদিকে বাংলাদেশি অভিবাসীদের দেশে ফিরতে সহায়তা করায় আইওএমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) এবং হেড অফ চ্যান্সেরি আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘অসহায় অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অংশীদারিত্ব এবং সবার সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আইওএম জানিয়েছে, অসহায় অবস্থায় থাকা অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার এই প্রক্রিয়াটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। বালি প্রসেসের ‘ভলান্টারি রিটার্নস সাপোর্ট অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম’ এবং নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আটকে পড়া অভিবাসীদের সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদান, বিশেষ করে মানবপাচার ও মানব চোরাচালানের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য পরিচালিত আইওএমর ‘কোঅপারেশন অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল সলিউশন (কম্পাস)’ এর সমন্বিত উদ্যোগে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে।
লেবাননের অধিবাসী এবং দেশটিতে অসহায় অভিবাসীদের মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে একটি সমন্বিত এবং বহুখাতভিত্তিক ‘ইমারজেন্সি রেসপন্স প্লান (ইআরপি) ২০২১-২-২২’ হাতে নিয়েছে আইওএম। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৮.৫ মিলিয়ন ডলার।