বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব ও কবরে তার মরদেহ আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিতে মরদেহ আছে কি না তা নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রশ্ন তোলার পর এ ঘোষণা দিলেন গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। যারা জিয়াউর রহমানের খেতাব ও মরদেহ নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন, এতে সব মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করা হচ্ছে। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভবিষ্যতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হবে।’
তারেক রহমানের ১৪তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন আয়োজিত ‘ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এবং আজকের বাংলাদেশ’-শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
গত কয়েক দিন ধরেই জিয়ার সমাধিতে মরদেহ থাকা না থাকা নিয়ে পাল্টাপাল্টি কথা বলেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে কথা বলেছেন।
সম্প্রতি দলীয় এক সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জিয়া কোথায় যুদ্ধ করেছেন সেই প্রমাণ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নেই বলেও মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার জানাজার বিষয়টি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের জানাজার সঙ্গে তুলনা করে কাদের বলেন, ‘মানুষ একজন প্রেসিডেন্টের জানাজা পড়েছে, কিন্তু কফিনে যে লাশ ছিল, তা তো দেখাতে পারেননি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের জানাজায়ও হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল, কিন্তু কফিনে তো তার লাশ ছিল না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে নাকি জিয়াউর রহমানকে প্রথম কবর দেয়া হয়েছিল। সেখানেও জিয়াকে কবর দিতে কেউ দেখেনি, একটা বাক্স দেখেছিল।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব কথার জবাবে গয়েশ্বর বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে সার্টিফিকেট দেয়ার অধিকার কারও নেই। এই কথার মাধ্যমে তারা নোংরা রাজনীতির চর্চা করছে। জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এক চিরন্তন সত্য। এইসব নিয়ে নোংরা কথা বলে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়।’
শেখ হাসিনা না থাকলে আওয়ামী লীগ ‘ফুলস্টপ’ হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অস্তিত্বের কারণে আওয়ামী লীগ টিকে আছে, কিন্তু দিনে দিনে তাদের ভিত দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তাদের পতনে সময় ঘনিয়ে এসেছে।
‘শেখ হাসিনা না থাকলে আওয়ামী লীগ নেতাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই দল টিকিয়ে রাখতেই শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকছেন। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসতে শেখ হাসিনার পতনের কোনো বিকল্প নেই।’
তারেক রহমানের কারামুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া এখনও বন্দি। তাই তাদের পরিপূর্ণ মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারে তাদের মুক্তির কোনো বিকল্প নেই।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর আলম ও এলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম।