বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৬ টাকার বড়ি সোয়া ২ টাকায়, গ্রেপ্তার ৭

  •    
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯

ডিবির ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকার ভেতর ও বাইরের জেলাগুলোতে কারখানা স্থাপন করেন। তারা নকল ওষুধ উৎপাদন করে তা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করে আসছিলেন।

একমি ল্যাবরেটরিজের পরিচিত বড়ি মোনাস-১০। এর প্রকৃত দাম ১৬ টাকা। কিন্তু ঠিক একই নাম, প্যাকেট ব্যবহার করে নকল মোনাস-১০ বিক্রি হচ্ছে ২ টাকা ২৫ পয়সায়। এ বড়ি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

নকল এ ধরনের বড়ি উৎপাদন, বাজারজাত করার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

রাজধানীর কাজলা, আরামবাগ ও মিটফোর্ড এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিবির ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকার ভেতর ও বাইরের জেলাগুলোতে কারখানা স্থাপন করেন। তারা নকল ওষুধ উৎপাদন করে তা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করে আসছিলেন।

ওই সাতজন হলেন তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আল মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একমি কোম্পানির মোনাস বড়ির ৭০০ বাক্স, স্কয়ার কোম্পানির সেকলোর ৫০ বাক্স, জেনিথ কোম্পানির ন্যাপ্রোক্সেন প্লাসের ৭৪৮ বাক্সসহ অন্য কিছু কোম্পানির বিপুলসংখ্যক নকল ওষুধ, এগুলো তৈরির মেশিন ও ওষুধের খালি বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে।

আসামিদের বৃহস্পতিবার আদালতে তুলে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে ডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়।

কী জানাল ডিবি

চক্রটি সারা দেশে নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। তাদের ভাষ্য, প্রত্যন্ত অঞ্চলকে টার্গেট করে বহুল বিক্রীত ওষুধগুলো নকল করে তারা বাজারজাত করে আসছিল।

ডিবির প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ৮ প্রকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, সেগুলোই নকল করে বাজারজাত করছিল চক্রটি। আসল ওষুধের প্রকৃত দামের তুলনায় অনেক কম দামে নকল ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছিল।

‘এগুলো মাদকের থেকেও ভয়ংকর। মানুষ অসুস্থ হয়ে ওষুধ খায়। আর নকল ওষুধ খেয়ে মানুষ সুস্থ না হয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

ডিবির প্রধান জানান, এ চক্র যেভাবে ওষুধ নকল করে তা সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে পারে না। শুধু যারা ওষুধ উৎপাদনসংশ্লিষ্ট, তারাই বিষয়টি বুঝতে পারে। এ কারণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় হয়ে সব ধরনের নকল ওষুধ তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নকল ওষুধ কতটা ভয়াবহ

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জয় চৌধুরী বলেন, নকল ওষুধ ব্যবহারে হৃদপিণ্ড, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে এ ধরনের ওষুধ। নকল অ্যান্টিবায়োটিক খেলে পরবর্তী সময়ে আসল অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে কাজ করে না।

জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. বেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজারে যে ওষুধগুলো সব থেকে বেশি চলে, সে ওষুধগুলো নকল করে চক্রটি। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো যেসব নীতিমালা ও প্রক্রিয়া মেনে ওষুধ তৈরি করে, নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকরা এর কিছুই মানে না। এ ছাড়া তারা কোনো কেমিস্ট এবং ফার্মাসিস্টও নিয়োগ দেয় বলে আমার মনে হয় না।’

নকল ওষুধ চেনার উপায় কী

নকল ওষুধ কীভাবে চেনা যাবে জানতে চাইলে জেনিথের এমডি বেলাল বলেন, ‘নকল ওষুধ এমনভাবে তৈরি করা হয় যা সাধারণ ক্রেতাদের চেনার কোনো উপায় নাই। তবে প্রকৃত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আসল আর নকল ওষুধের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবে। ওষুধের প্যাকেটের সিকিউরিটি হলোগ্রামও নকল করছে চক্রটি।’

তিনি জানান, বড়ির ক্ষেত্রে আসলটি অনেক শক্ত হয়। আর নকলটি নরম হয়। ওষুধের ভেতর রঙের পার্থক্যও থাকে।

আসামিদের কে কী করতেন

আসামিরা কে কী করতেন জানতে চাইলে ডিবির প্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, তরিকুল ইসলাম ও সৈয়দ আল মামুন কারখানা স্থাপন করে এসব নকল ওষুধ তৈরি করতেন। সাইদুল ভেজাল এ ওষুধ তৈরির প্রধান কারিগর। মনোয়ার ফয়েল সরবরাহ করতেন।

আবদুল লতিফ ওষুধের পাতায় ছাপ দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসহ সিলিন্ডারের জোগান দিতেন। নাজমুল ঢালী ওষুধের বাক্সে ছাপ দেয়ার পর তৈরি করা এসব নকল ওষুধ সাগর আহমেদ মিলনের নেতৃত্বে মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে বাজারজাত করতেন।

ডিবির কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ‘এই সকল ওষুধের ইনগ্রিডিয়েন্টসে (উপাদান) মূলত প্রয়োজনীয় কোনো সক্রিয় উপাদান থাকে না। এ ছাড়া মেইন স্টার্চ (এক ধরনের উপাদান) নিম্ন গ্রেডের ব্যবহৃত হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর