বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেসে-খেলে দিন কাটছে রাবেয়া-রোকাইয়ার

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:১৮

রোকাইয়া সম্পূর্ণ সুস্থ না হলেও বিছানায় শুয়ে খেলছে। তার চিকিৎসা চলছে। তবে করোনায় ফিজিওথেরাপি দিতে না পারায় কিছুটা বাধার মুখে পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বাড়ির অন্য শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত খেলাধুলা করে রাবেয়া। বিকেল হলেই খেলতে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। বাড়ির সবাইকে সে বেশ ভালোভাবেই চিনতে পারছে।

অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা হওয়া জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া সুস্থ আছে। হেসে-খেলেই দিন কাটছে তাদের। আলাদা হওয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে রাবেয়া। তবে এখনও চলাফেরার শক্তি নেই রোকাইয়ার।

পাবনার চাটমোহরে গ্রামের বাড়িতে আছে ওরা। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ চলছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে তাদের চিকিৎসা চলছে। এর আগে প্রায় সাড়ে তিন বছরের চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের মার্চে রাবেয়া ও রোকাইয়াকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাদের মা-বাবা।

ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এশিয়া মহাদেশে এই প্রথম জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয়া দুই শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়েছে। রাবেয়া-রোকাইয়াকে সুস্থ করতে তাদের বাবা-মায়ের অভিযাত্রা যেন রূপকথার গল্প।

রাবেয়া-রোকাইয়া পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামে স্কুলশিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগমের দুই সন্তান। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পাবনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে জোড়া লাগানো মাথা নিয়ে জন্ম হয় তাদের।

চিকিৎসকরা জানান, ক্রেনিয় পেগাজ নামের বিরল রোগে আক্রান্ত রাবেয়া-রোকাইয়া। কীভাবে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তাদের বাবা-মা। কন্যাদের নিয়ে এ দম্পতির অসহায়ত্বের খবর পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির পর দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ চিকিৎসদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার। এই অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় অংশ নেন হাঙ্গেরির একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। সাড়ে তিন বছর চিকিৎসা শেষে চলতি বছর ১৫ মার্চ সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরে রাবেয়া-রোকাইয়া।

আটলংকা গ্রামে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রোকাইয়া সম্পূর্ণ সুস্থ না হলেও বিছানায় শুয়ে খেলছে। তার চিকিৎসা চলছে। তবে করোনায় ফিজিওথেরাপি দিতে না পারায় কিছুটা বাধার মুখে পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বাড়ির অন্য শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত খেলাধুলা করে রাবেয়া। বিকেল হলেই খেলতে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। বাড়ির সবাইকে সে বেশ ভালোভাবেই চিনতে পারছে।

প্রায় পাঁচ বছর বয়সী রাবেয়া সাড়ে তিন বছর ছিল সিএমএইচে। সেখানে মানুষজনের তেমন আনাগোনা ছিল না। বাড়ি ফেরার পর আশপাশের এলাকার মানুষ দেখতে আসে তাদের। নতুন কাউকে দেখে লজ্জা পায় সে।

তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি ফেরার পর এখন পর্যন্ত সবই ভালো। রোকাইয়া আলাদা হওয়ার পর ভালোই ছিল। চিকিৎসা চলাকালে দুই বার স্ট্রোক করায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রথম দিকে ওর কিডনিতে সমস্যা ছিল। সেটা পরে ঠিক হয়। এখনও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছি।’

তিনি বলেন, ‘হাঙ্গেরির চিকিৎসক ডা. গ্রেক পাতাকি ও ডা. ইস্টবান চুকাই এবং বাংলাদেশের ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাশোনা করেছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা হাঙ্গেরি ও বাংলাদেশের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দীর্ঘ এই চিকিৎসায় বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরিতে প্রায় ১০০টি অপারেশন হয়েছে। হাঙ্গেরিতে থাকতে হয়েছে সাত মাস।’

রাবেয়া-রোকাইয়ার মা স্কুলশিক্ষিকা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘ঢাকার সিএমএইচে এবং হাঙ্গেরিতে ব্যাপক নিরাপত্তার সঙ্গে চিকিৎসা হয়েছে। বাংলাদেশি ও হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম চিকিৎসা দিয়েছেন। আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীসহ চিকিৎসকদের প্রতি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা আর চিকিৎসকদের মেধা ও পরিশ্রমের ফলে আমাদের শিশুদের আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। রাবেয়া পুরোপুরি সুস্থ। ইনশাআল্লাহ সবার দোয়ায় রোকাইয়াও এক দিন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।’

এ বিভাগের আরো খবর