সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা দুই ধাপ এগিয়ে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর আরেকটি মামলা এক ধাপ এগিয়ে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। বাকি ৩৫টি মামলা দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের শর্ত সাপেক্ষে কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া এখন বাসায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যে একটি মামলা আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে, আরেকটি হাইকোর্টে।
এসব মামলার শুনানির উদ্যোগের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাহারের দাবি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের। যে কারণে শুনানির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি গত দেড় বছরেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখন সরকার সেগুলো প্রত্যাহার করবে। আমরা শুনানির উদ্যোগ কেন নেব? সবগুলোই মিথ্যা মামলা, সরকার তা জানে। আমাদের দাবি হলো, এখন সরকার এগুলো প্রত্যাহার করে নিক।
‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করবে সরকার। অন্যথায় আন্দোলন করে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছে, রাজনৈতিকভাবেই মামলা প্রত্যাহার করা হবে।’
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। সব মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। শুধু দুটি মামলায় ওনার কনভিকশন (সাজা) হয়েছে। মামলা দুটি হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।
‘এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে আপিল করেছি। সেই আপিল যথারীতি শুনানি হবে। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ তার সাজা বৃদ্ধি করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে আপিল করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন আপিল বিভাগে এবং হাইকোর্ট বিভাগে আপিল মামলাগুলাে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুনানি হয়। বছরেরটা বছর এভাবে ধরে শুনানি করা হয়। যখন এই মামলার শুনানির জন্য তালিকায় আসবে, তখন আমরা শুনানি করব।
‘আমরা তো আপিল ফাইল করে রেখেছি। স্বাভাবিকভাবে যখন শুনানির জন্য আসবে তখন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিব।’
আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭ মামলার মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানি মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা একটি আর বাকিগুলো হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। এর মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত আছে ১৬টি মামলার কার্যক্রম।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপর থেকে আজ অবধি এ মামলার শুনানি শুরু হয়নি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান। রায়ে খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্ট। এরপর থেকে মামলাটি সে অবস্থায় আছে।
রাজধানীর দারুসসালাম থানায় ১১ মামলা
রাজধানীর গাবতলী, বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোডসংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা দানসহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাইকোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় চার মামলা
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। এ মামলাগুলোও হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে।
কুমিল্লায় ৩ মামলা
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দারপুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। এর একটিতে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন, যা পরে আপিলে বহাল থাকে। আরেকটি মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি অবস্থায় রয়েছে।
একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় সাত যাত্রী মারা যান এবং আরও ২৫-২৬ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বিচারকার্য এখনও শুরু হয়নি।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এক মামলা
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে স্থগিত রয়েছে।
নাইকো দুর্নীতি মামলা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে।
গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য গুলশানে সমবেত হয়। পরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও করার জন্য রওনা হলে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করা হয়। পরে ওই ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুবুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।
খুলনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা
খুলনার ফুলতলা উপজেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুলতলা থানার সাব-ইন্সপেক্টর খায়রুল বাশার বাদী হয়ে খালেদা জিয়াসহ মোট ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। বর্তমানে মামলাটি খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর্যায়ে রয়েছে।
মানহানির দুই মামলা
শ্রমিক দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বিচারিক আদালতে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী মানহানির মামলা করেন, যা বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ মে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর মুরাদনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ।
৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা
২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে এনে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ দলটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পঞ্চগড়ে এক মামলা
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবীর রিজভীকে হুকুমের আসামি করে পঞ্চগড়ের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ মামলাটি করা হয়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ মামলাটি করেন। মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে তাদের নির্দেশে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সন্ত্রাসীরা পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা ও নানাভাবে জানমালের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটিও পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। পরের দিন খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন জজ কোর্টে মামলা করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে দুই মামলা
২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়।
নড়াইলে মানহানির মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে খালেদা জিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে তাকে (বঙ্গবন্ধু) ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।’
তার ওই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইলের কালিয়ার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের জেলা জজ আদালতে তিনি এ মামলা করেন। এ মামলাটিতেও পুলিশের প্রতিবেদন জমা পড়েছে।
‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা
১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে ভুয়া অভিযোগ করে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে পুলিশের প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত। তবে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন।
বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের মামলা
বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মানহানির আরেক মামলা
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এ দেশের জনগণ যুদ্ধে নেমেছিল।’ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আরও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে কোনো উন্নতি হয়নি। সারা দেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় লোকদের জঙ্গি বানিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে।’
এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির অভিযোগে মামলা করা হয়।