কাতারের দোহায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনকে সার্থক করতে চান বিশ্বনেতারা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ইউএনএলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য উচ্চ পর্যায়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল পর্যালোচনা সভার সমাপনী দিন ছিল বৃহস্পতিবার।
সভায় ৫ম সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেয়া বিশ্বনেতা ও নীতিনির্ধারকরা জাতিসংঘ ঘোষিত সব কর্ম পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি
করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তারা।
বাংলাদেশের পক্ষে উচ্চ পর্যায়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল পর্যালোচনা সভায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্মেলনে মালাউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইজেনহাওয়ার মকাকা, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও হাই রিপ্রেজেনটেটিভ এবং জাতিসংঘের ৫ম এলডিসি সম্মেলনের মহাসচিব কোর্টনি রাট্রে এবং আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল এবং এসকেপের নির্বাহী সচিব আর্মিদা সালসিয়া আলিসজাহবানসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
বৃহস্পতিবার সুজাইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠেয় এই সমাপনী অধিবেশনের বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এলডিসি বা স্বল্পন্নোতের তকমা কখনোই সম্মানের হতে পারে না। দরিদ্র হয়ে জন্ম নেয়া অপরাধ নয়, কিন্তু দরিদ্র হয়ে বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়া অভিশাপ। কেননা আমাদের রয়েছে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মগতভাবে আমরা সবাই সমান নই। তবে আমাদের অবস্থার উন্নতির জন্য রয়েছে এক বা ভিন্ন ভিন্ন রকমের সুযোগ ও সক্ষমতা। আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই, বিশেষ করে দুইশ বছর আগেও দেখি, আজকের উন্নত দেশগুলো বর্তমান অবস্থাতে ছিল না। তাদের এখনকার সুযোগ-সুবিধাগুলো তখন তাদের ছিল না।
‘তখন দরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন অবস্থা ছিল ৮০ এবং ২০ অনুপাতে। এখন এটি সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থায়। কেউ যদি তার পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা না করে, তাহলে কেউই তাকে দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে না। আর যদি সত্যিই অবস্থার পরিবর্তন করতে চায়, অবশ্যই সফলতা আসবে।’
বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পৃথিবী বিখ্যাত স্বনামধন্য নেতা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয় বরং নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে উন্নতি করতে হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই নীতিতে বিশ্বাস করেন। তার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত এক দশকে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং ইতোমধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দু:খজনক যে, ইস্তাম্বুল কর্মসূচির মেয়াদ (২০১১-২০২০) শেষেও ২০২০ সালের মধ্যে এলডিসির সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণ হয়নি। মাত্র চারটি দেশ উত্তরণ লাভ করেছে এবং বাকি পাঁচটি উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’
সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সকলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। জাতিতে জাতিতে বিভেদ নিরসনে সব উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশকে পারস্পারিক আন্তরিক সহযোগীর হাত প্রসারিত করতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই উপরে উঠতে হবে।
অর্থমন্ত্রী ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনকে অত্যন্ত ফলপ্রসু করতেও সকলকে আহ্বান জানান।