আগস্টে ঢাকায় তেমন বৃষ্টিপাত দেখা না গেলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ঠিকই বৃষ্টি হয়েছে। গেল মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সেপ্টেম্বরেও তেমনই বৃষ্টি থাকবে; সম্ভাবনা রয়েছে একটি নিম্নচাপের। তাতে দেখা যেতে পারে আকস্মিক বন্যা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগস্টে সার্বিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বৃষ্টি হয়েছে। তবে বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম, ঢাকা ও খুলনা বিভাগে স্বাভাবিক এবং অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৪০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা বলে হলেও বৃষ্টি হয়েছে ৪৭৭ মিলিমিটার। এসময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এরপর রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগস্টে দেশে বৃষ্টিপাত বেশি ছিল। সেপ্টেম্বরেও তেমন থাকবে। আমরা সবসময় কম বেশি বৃষ্টিপাত ১০ পার্সেন্ট ধরেই রাখি।’
দেশে শীতের আভাস কবে পাওয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নে আফরোজা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে মুনসুন (মৌসুমী বায়ু) চলে গেলে শীতের বিষয়ে বোঝা যেতে পারে। দেশে এখনও মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে।
কেমন হবে সেপ্টেম্বর
আবহাওয়া অফিসের মাসভিত্তিক পূর্বাভাসে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে বৃষ্টিপাত ধরা হয়েছে ৩৮০ মিলিমিটার।
এসময় চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি বৃষ্টির হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সেপ্টেম্বরে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ধরা হয়েছে ৩.০-৪.০ এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণ কাল ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা থাকতে পারে।
কেমন ছিল আগস্ট
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগস্ট মাসের ১ থেকে ৩ তারিখ, ৬ থেকে ৮, ১২ থেকে ১৩, ১৭ থেকে ১৮ এবং ২৫ থেকে ২৬ তারিখ সারা দেশে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হয়। এ সময় দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৬০ মিলিমিটার, ৭ আগস্ট কুতুবদিয়ায়।
আগস্টে বেশি বৃষ্টিপাতের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ১৯ আগস্ট পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ, যা ১৭ আগস্ট উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। এটি পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ১৯ আগস্ট মৌসুমী অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়। ২৮ আগস্ট পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ৩১ আগস্ট মৌসুমী অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়।
সবশেষ পূর্বাভাস
বৃহস্পতিবার বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দূর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
রংপুর রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।