বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অদৃশ্য হবে না রোহিঙ্গা ইস্যু: ইইউ

  •    
  • ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:০৪

ঢাবি অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি চীন ও থাইল্যান্ডের পর মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমি এখানে ব্যবসায়িক আগ্রহ এবং রাজনীতি দেখে বুঝতে পারি, ইইউ তার ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সত্যিকার অর্থে চাপ দিতে পারছে না।’

চলমান করোনা মহামারি সংকট ও আফগান পরিস্থিতি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তিরিঙ্ক।

তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে ম্যাজিক রেসিপি বা ক্রিস্টাল বল নেই যে, নিমেষে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এটি (রোহিঙ্গা ইস্যু) এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে না।’

বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ইইউ দূত এসব কথা বলেন।

কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।

বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, রোহিঙ্গা ইস্যু অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমি এটি অনুসরণ করতে থাকব।’

আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

এ ছাড়া আলোচক প্যানেলে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জিয়াদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।

এনায়েতুল্লাহ খান ক্রমবর্ধমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তান-সংকটের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, ‘মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি মানুষের মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুকে অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন ও জাপান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আমি মনে করি না।’

ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে ইইউ বাংলাদেশকে কী সহায়তা করতে পারে?’

জবাবে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রথমে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তবে এটি খুবই দুঃখজনক যে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যা সত্যিই এই অলোচনার ক্ষেত্রে এক বিরাট ধাক্কা।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে চলা তৎপরতা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছে এবং এটি খুব ইতিবাচক নয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং জাপানের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। এটি আমাদের সব সময় এজেন্ডায় থাকে।’

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইইউ রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার সহায়তায় উল্লেখযোগ্য তহবিল দিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে এমন পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মহামারি এবং রোহিঙ্গা দুটি বিষয় এখন বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগ এবং এই দুটি বিষয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির সাথে জড়িত। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।’

বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তিরিঙ্ক

তিনি বলেন, ‘ইউরোপের মূল্যবোধ, আইনের শাসন, সরকার পদ্ধতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের বিষয়টি আসলে মেলানো যায় না।

‘আমি বুঝতে পারছি না ইইউ পার্লামেন্ট কেন বর্তমান মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ভট গণতন্ত্রকে সহায়তা করে। ইইউ মিয়ানমারের নির্বাচনেও সহায়তা করেছে। সামরিক কর্মকর্তারা যখন সংসদে বসেন তখন এটা গণতন্ত্র থাকে না। ইইউকে আরও কঠিন হওয়া উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।’

তিনি বলেন, ‘যখন মিয়ানমারের কথা আসে প্রায় ৯০০ মানুষ হত্যার পরও ইইউ এখনও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় একই ধরনের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা কেবল কিছু সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, যারা কখনোই ইইউ দেশগুলোতে যায় না এবং তাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। আপনারা খুব সম্প্রতি মিয়ানমারকে ঋণ পরিশোধেও সহায়তা করেছেন।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি চীন ও থাইল্যান্ডের পর মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমি এখানে ব্যবসায়িক আগ্রহ এবং রাজনীতি দেখে বুঝতে পারি, ইইউ তার ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সত্যিকার অর্থে চাপ দিতে পারছে না।’

তিনি বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূতকে ব্রাসেলসে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে ইইউ মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাবে না, যদিও ইরান ও উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না পরিস্থিতি আরও উন্নত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইইউ আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, কিন্তু মিয়ানমারে তা করবে না। ৯০০ এরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, কিন্তু আপনারা এখনও সেদিকে যাননি।’

তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস ছাড়া ইইউ দেশগুলোর কেউই আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়াকে প্রকাশ্যে সহায়তা করেনি। যদিও ইইউ সাময়িক রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু তারা সহায়তা করছে না।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণহত্যা ইস্যুতে সামগ্রিকভাবে ইউরোপ খুবই সক্রিয় ছিল, কিন্তু এখানে যখন মিয়ানমারের কথা আসে তখন তারা চুপ থাকছেন।’

এই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, 'উইঘুরদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ক্ষেত্রে আপনি চীনের সমালোচনাকারী, কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষেত্রে আপনি চুপ। সুতরাং আমি মনে করি এটি দিন দিন ক্ষতির কারণ হচ্ছে এবং একপর্যায়ে জনগণ ইউরোপকে গুরুত্বসহকারে নেবে না এবং তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় উপায়টি হলো রোহিঙ্গা প্রবাসীদের নাগরিক সত্তা গঠনে সহায়তা করা। কারণ ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশে রোহিঙ্গা সংগঠন রয়েছে। ইউরোপের রোহিঙ্গা প্রবাসীরা বেশ সক্রিয় এবং ভালো অবস্থানে রয়েছেন।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘যখন একটি দেশ গণহত্যা করে তখন তা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে থাকে না। কারণ সংজ্ঞা অনুসারে এটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি মনে করি, ইইউর একত্রিত হওয়ার সময় এসেছে এবং রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকা উচিত। ওই সম্মেলন থেকে একটি নাগরিক সত্তা গঠন করা যেতে পারে।’

মিয়ানমারের ভূরাজনীতিতে ভারত, চীন এবং জাপান এই তিনটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেও ইমতিয়াজ আহমেদ উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক যখন ব্রাসেলসে ফিরে যাবেন তখন সমস্যাটি সমাধানের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেন। কারণ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, ‘দুটি বড় সমস্যাগ্রস্ত দেশ মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান। এই দুটি সমস্যা সমগ্র অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তায় এবং বিশ্বব্যাপী অনেক প্রভাব ফেলবে।’

তিনি ইইউকে শুধু বিশ্বব্যাপী নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের ভূমিকা পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সক্রিয় সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আলোচনা শেষ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর