চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার তত্ত্বাবধানে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুককে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
তিনি সিআইডির ঢাকা মহানগর উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন।
পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশের পরদিনই এই আদেশ এলো, যদিও এর সঙ্গে তাকে অবসরে পাঠানোর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এই বিষয়টি নিয়ে কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলছেন না।
একই আদেশে অবসরে পাঠানো হয়েছে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ষষ্ঠ এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক আবদুর রহিমকেও। তিনি পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় চাকরি করতেন।
বৃহস্পতিবার উপসচিব ধনঞ্জয় দাসের সই করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হিসেবে ‘জনস্বার্থের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে তাদেরকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।’
কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন। জারির তারিখ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে, অর্থাৎ এই আদেশ এরই মধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। তারা আর চাকরিতে নেই।
পরীমনিকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে মোট তিনবার। আর এতে রিমান্ডের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করে হাইকোর্ট
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কারও চাকরির বয়স ২৫ হয়ে গেলে যে কাউকে অবসরে পাঠানো যায়।
আলোচিত তিনটি মামলার তত্ত্বাবধানে থাকা শেখ ওমর ফারুককে কেন অবসরে পাঠানো হলো, সে বিষয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই আদেশ নিয়ে ওমর ফারুকের প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে ছিলাম। একটু আগে জানতে পেরেছি। যেহেতু আমি বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি জানি না, সেহেতু এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না।’
গত ১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন মডেল পিয়াসা ও মৌ। ৪ আগস্ট পরীমনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তিনজনের বিরুদ্ধেই মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রথমে মামলার তদন্ত দায়িত্বে গোয়েন্দা পুলিশ থাকলেও পরে তা সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
এই মামলায় পরীমনিকে মোট তিন দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় গোয়েন্দা পুলিশ ও পরের দুই দফায় রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি।
১ সেপ্টেম্বর পরীমনি জামিনে মুক্ত হলে হাইকোর্ট বারবার রিমান্ডে নেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ ক্ষেত্রে রিমান্ডের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে আদালত।
বিচারপতি বলেন, ‘ওই রিমান্ডের বিষয়ে আমরা নথি তলব করতে চাচ্ছি। তাদের (নিম্ন আদালত) কাছে কী তথ্য-উপাত্ত ছিল যে তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হলো। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা ও কেস ডকেট (মামলার নথিপত্র) তলব করব। এ ছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনে কী তথ্য-উপাত্ত ছিল তাও চাইব।’