দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৮১ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের।
২৪ ঘণ্টায় যারা হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন প্রথমবারের মতো তাদের বয়সও বিশ্লেষণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। তবে মৃত্যুর সংখ্যায় বেশি চল্লিশোধ্র্ব, দুইজন।
গত জানুয়ারিতে ৩২ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। জুনে এটা ১৭২ জনে ওঠে। জুলাই মাসে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। তাতে সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৮ জন। জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। আগস্টের চিত্রটি ছিল উদ্বেগজনক। এই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী ছিল ৭ হাজার ৬৯৮ জন। চলতি মাসেও তাই চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বৃহস্পতিবার থেকে বিকেলে জানানো হয়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে শুধু ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছেন ২৮৪ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৯৮১ জনের মধ্যে এ ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৬৮ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ২৬২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ১৩১ ডেঙ্গু রোগী।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগস্টে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মাসের দুই দিনে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২১ বছর ধরে দেশে ডেঙ্গুর সার্বিক বিষয় নিয়ে তথ্য জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে মূলত ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মারা যায় ১৪৮ জন। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আর কখনও দেখেনি দেশ। এর আগে ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ২০০২ সালে, সেবার ৫৮ জনের মৃত্যু সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া ২০০১ সালে ৪৪ জন মারা যায়। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে এবার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা করোনা হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার। তাদের যেন হাসপাতাল থেকে ফেরত না দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘করোনাভাইরাস আসার আগে ডেঙ্গু চিকিৎসা হতো সব হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। সেই বিভাগগুলোকে এখন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীরা অবহেলিত হচ্ছেন। করোনার সংক্রমণ এখনও সেভাবে কমে আসেনি। তাই করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।