ক্লিনফিড ছাড়া অক্টোবর থেকে দেশে কোনো বিদেশি চ্যানেল চলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো), টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর ও কেবল অপারেটর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এর কোনো ব্যত্যয় হলে আইন প্রয়োগ ও লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যেসব বিদেশি চ্যানেল আছে, আইন অনুযায়ী তারা ক্লিনফিড চালাতে বাধ্য, কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ওই সমস্ত চ্যানেল তাদের এন্ড থেকে ক্লিনফিড করে এখানে পাঠাচ্ছে না।
ক্লিনফিড নিশ্চিত করা হলে দেশে কোনো বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারে বিদেশি কোনো বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য কোনো বাণিজ্যিক কনটেন্ট থাকবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল অ্যাটকো, টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর ও কেবল অপারেটররা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে আমাদের দেশে কোনো অবস্থাতেই ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেলকে আমরা চালাতে দিতে পারি না এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা হবে।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১ ডিসেম্বর থেকে কেবল অপরাটেরদের ডিজিটাল সেটাপ বক্সের মাধ্যমে টেলিভিশন সংযোগ দিতেও নির্দেশ নিয়েছেন মন্ত্রী। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে কেবল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ডিজিটালাইজড করার কথা থাকলেও করোনার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কেবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটালাইজড করা হবে। সেটি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হবে গ্রাহকদের অবহিত করার জন্য। ৩০ নভেম্বরের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে যে অ্যানালগ সম্প্রচার সিস্টেম আছে সেটা কাজ করবে না। ডিজিটাল সেটাপ বক্সের মাধ্যমে সম্প্রচার হবে।’
পরিপত্র জারির ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রেডি, কিন্তু দর্শক এন্ডে যদি সেটাপ বক্স দেয়া না হয়, দর্শকরা যদি সেটি না নেয়, তাহলে তো সেটা বাস্তবায়ন করা কঠিন।’
সকল বিভাগীয় ও মেট্রোপলিটন শহর এবং কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুরকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিজিটালাইজড করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, বাকি জেলাগুলোর বিষয়ে নভেম্বরে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইন্টারনেট সেবার নামে অননুমোদিত টিভি চ্যানেল সম্প্রচার করা যাবে না বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘যারা ইন্টারনেট কানেকশন দিচ্ছে সেই ইন্টারনেট কানেকশন সার্ভিস প্রোভাইডাররা আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে টেলিভিশন দেখাচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, আনঅথরাইজড অনেক চ্যানেল দেখানো হয়। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না।
‘একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আইপি টিভি দেখানো হচ্ছে এবং মানুষ দেখছে। এই নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে এবং একজনের ডোমেইনে আরেকজন অনুপ্রবেশ করছে বা এটি হচ্ছে, সেটা নিয়ে তিনটি মন্ত্রণালয় তথ্য, টেলিকম ও আইসিটি মিনিস্ট্রি আমরা সহসা একটা বৈঠক করব অংশীজনসহ। যাতে করে এখানে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে সেটা না থাকে।’
বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড নিশ্চিত করা এবং অবৈধ সংযোগ বন্ধে দ্রুতই সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ক্লিনফিড চলছে কি না, ১২০০ কেবল অপারেটর ও ফেক লাইসেন্স বাতিল করেছি পরপর দু বছর রিনিউ না করার কারণে। আইন অনুযায়ী কেউ এক বছর রিনিউ না করলে লাইসেন্স বাতিল হয়।... দেখা যাচ্ছে যাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে তারা কেউ কেউ এখনও কেবল অপারেটর হিসেবে কাজ করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যখন কেবল অপারেটরদের লাইসেন্স দেয়া হয় তখন এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়। এরপরও প্রায়শই এলাকা নিয়ে নানা সময় ঝামেলা হয়, সেই ঝামেলার পরিপ্রেক্ষিতে এমনকি বড় ঝামেলা হয়, খুন খারাবির মতো ঘটনা বিভিন্ন সময় ঘটেছে। সেজন্য আমরা স্ট্রিক্টলি না আজকের সভা থেকে বলে দিচ্ছি একজনের এলাকায় আরেকজন যেতে পারবে না। সেটার জন্য এনফোর্সমেন্ট করব।’
দেশে আকাশ এবং বিটিভিকে ডিটিএইচ লাইসেন্স দেয়া আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যকোনো ডিটিএইচ সেবা প্রদান করা যাবে না, কিন্তু আমরা দেখেছি টাটা স্কাইয়ের নামে ডিটিএইচ সেবা বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হচ্ছে, সেটির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট করেছি, অনেক কমেছে। ইদানিং অংশীজনেরা বলেছেন আজকে যে চায়নিজ সেটাপ বক্স এনে অন্যদের ডিশ লাগিয়ে সেখান থেকে আবার ডিটিএইচ সেবা নেয়া হচ্ছে। এগুলো কিন্তু এনফোর্সমেন্ট করব। কঠিন শাস্তি হবে।’
এই বৈঠকের পর এসব অবৈধ সেবা বন্ধ হবে বলে আশা করেন মন্ত্রী।
কেবল অপারেটরদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘কেবল অপারেটররা অনেক সময় নিজেরা সিনেমা দেখায়, নিজের এরিয়ার মধ্যে। বিজ্ঞাপন দেখায়, অনুষ্ঠান দেখায়। এগুলো আইনের ব্যত্যয়। আমরা সেগুলোর বিষয়ে এনফোর্সমেন্টে যাব।’