ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সূচক এখন সাত হাজার ছুঁই ছুঁই। প্রায় পৌনে ১১ বছর পর এই মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
তিন কর্মদিবস পতনের পর টানা তিন কর্মদিবস বেড়ে সূচক এখন ৬ হাজার ৯৮১ পয়েন্ট। তিন দিনে ৫৯ পয়েন্ট কমা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও পরের তিনি দিনে বাড়ল যথাক্রমে ৪৫, ৪৭ ও ৬৪ পয়েন্ট।
লেনদেন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সূচক ৬ হাজার ৯৯১ পয়েন্টে উঠে গেলেও শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে তা কমে ১০ পয়েন্ট।
পর পর তিন দিন সূচকের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। টানা তিন দিন সূচক পতনের শেষ দিন সোমবার ১৬ কর্মদিবস পর লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল। এরপরের প্রতিদিনই লেনদেন আগের দিনকে ছাড়িয়ে গেছে।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও লেনদেন বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১১০ কোটি টাকার বেশি। আবার তা আড়াই হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে গেছে।
২০১০ সালের মহাধসের প্রতিক্রিয়ায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাত হাজারের নিচে নেমে আসার পর সূচক কখনও এতটা উঁচুতে ওঠেনি।
২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সূচকের অবস্থা এর চেয়ে বেশি ছিল। সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ১২৫ পয়েন্ট।
ডিএসইর প্রধান সূচকের নাম এখন ডিএসইএক্স। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি চালু হয় এই সূচক।
ডিএসইর তুলনায় ডিএসইএক্স সূচক কিছুটা কম হয়। যেদিন ডিএসইএক্স সূচক যেদিন চালু হয়, সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। সেদিন ডিএসই সূচক ছিল ৪ হাজার ১৭১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ডিএসইর তুলনায় ডিএসইএক্স সূচক ২.৭৮ শতাংশ কম হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
সেই হিসাব করলে ডিএসইএক্স সূচকের আজকের অবস্থান ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির অবস্থানকে ছাড়িয়ে যায়। আজকের সূচকের সঙ্গে ২.৭৮ শতাংশ যোগ হলে তা হয় ৭ হাজার ১৭৫ পয়েন্ট।
সূচক প্রায় পৌনে ১১ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানের দিন ব্যাংক খাত ফিরেছে উত্থানে। প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতেও গেছে ভালো দিন।
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় লেনদেনে সেরা ছিল বিমা খাত। তবে কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। বস্ত্র খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। অল্প হলেও বেড়েছে বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর।
অবশেষে ব্যাংক ও নন ব্যাংকের উত্থান
গত ২৩ আগস্টের পর থেকে ব্যাংক খাতে প্রায় প্রতিদিনই দাম কমেছে অল্প করে। আগে আগে দুই দিন বেড়েছিল দাম।
গত এক বছরে পুঁজিবাজারের সূচক প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার পরেও সবচেয়ে ভালো লভ্যাংশ দেয়া এই খাতের এমন আচরণ এর আগেও দেখা গেছে।
অবশেষে দরপতনের ধাক্কা কাটিয়ে কোম্পানিগুলো এই কয়দিনে হারানো মূল্যের কিছুটা ফিরে পেল। দর বৃদ্ধির দিন বেড়েছে লেনদেনও।
ব্যাংকের মতো দর বেড়েছে আর্থিক খাতেও। তবে লেনদেন হয়েছে আগের দিনের মতোই।
ব্যাংক খাতে আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৬৫ কোটি টাকা বেড়ে আজ হাতবদল হয়েছে ২১৪ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার।
২৩ আগস্টের পর এই প্রথম ব্যাংক খাতে চাঙাভাব দেখা গেছে
ব্যাংক খাতের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি তিনটির দর।
তবে শতকরা হিসেবে দর বৃদ্ধির হার খুব একটা বেশি নয়। এই খাতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ৩.৯০ শতাংশ। শেয়ার দর ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা।
এরপরই আছে এবি ব্যাংক, যার দর বেড়েছে ৩.৭৯ শতাংশ। শেয়ার মূল্য ১৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৯১ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ৭ টাকা ১০ পয়সা থেকে ২.৮১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা। ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৪১ শতাংশ।
সেই তুলনায় আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর দর বেড়েছে বেশি। মাইডাস ফাইনান্সের দর দিনের সর্বোচ্চ দরের সীমা ছুঁয়েছে। ৯.৩০ শতাংশ বেড়ে ১২ টাকা ৯০ পয়সার শেয়ার হয়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সা।
এ ছাড়া ফারইস্ট ফিনান্সের দর ৫.৪৩, আইপিডিসির ৫.৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে বেড়েছে ১৬টির দর। কমেছে দুটির আর দুটি ছিল অপরিবর্তিত।
লেনদেন হয়েছে ১৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা যা আগের দিন ছিল ১৮২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
লেনদেনে আবার সেরা বিমা
গত কয়েক কার্যদিবস ধরে দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা বিমা খাতের শেয়ার দরে পতন হয়েছে বৃহস্পতিবার। লেনদেন হওয়া ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টি কোম্পানির দর কমেছে। বেড়েছে ১৮টির। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
সংশোধনের দিনও বিমা খাতের লেনদেন আগের দিনের মতোই ছিল অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় বেশি হয়েছে। আজ হাতবদল হয়েছে ৪১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের দিন অবশ্য এর চেয়ে বেশি ছিল। সেদিন লেনদেন ছিল ৪৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
বিমা খাতের দর বৃদ্ধির তালিকায় ছিল ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স।
ইস্টার্নের দর বেড়েছে ৫.২৪ শতাংশ, পাইওনিয়ারের ৪.৪৪ শতাংশ, সোনারবাংলার ৪.৩০ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে জনতা ইন্স্যুরেন্সের; ৩.৮৭ শতাংশ। কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ২.৯৭ শতাংশ। এছাড়া তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের ২.৭২ শতাংশ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ২.৭১ শতাংশ।
লেনদেন কমল মিউচ্যুয়াল ফান্ডে
মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তার ইউনিটধারীদের জন্য লোভনীয় লভ্যাংশ দিলেও তা আকৃষ্ট করতে পারছে না বিনিয়োগকারীদের। ফলে এ খাতের ইউনিটগুলোর দর উত্থানের চেয়ে পতনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে বেশি।
বৃহস্পতিবার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ১৮ লাখ। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এদিন অবশ্য তিনটি ফান্ডের লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট শেষ করা দুটি ফান্ড লেনদেন শুরু করেছে আজ।
টানা দ্বিতীয়দিনের মতো লেনদেনে সেরা হলো বিমা খাত। তবে মুনাফা উত্তোলনের প্রবণতায় কমেছে দাম
ফান্ড দুটি হলো গ্রিনডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দেয়া দুটি ফান্ডেরও দর কমেছে ৯০ পয়সা করে। নগদ লভ্যাংশের পরে কেন দর কমবে, এমন আলোচনার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এই ঘটনা ঘটল।
এর আগে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ নেয়া এনএলআই মিউচ্যুয়াল ফান্ড দুই দিনে দর হারিয়েছে ২ টাকা। তবে আজ ১০ পয়সা ফিরে পেয়েছে।
এদিন লেনদেন ১৩টি ফান্ডের দর বেড়েছে। কমেছে ৮টির। দর পাল্টায়নি ১২টির। আগের দিনও কমেছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর। সেদিন লেনদেনে ৮টি ফান্ডের দর বাড়লেও কমেছিল ১৭টি ফান্ডের।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৯টির। বেড়েছে ৩২টির।
লেনদেন হয়েছে ২৯৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২৭৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
চাঙা ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর পতন হয়েছে ৫টির, বেড়েছে ২৫টির। হাতবদল হয়েছে ১৮৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির, কমেছে ১টি। লেনদেন হয়েছে ১৪৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৭১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ২টির, বেড়েছে ১২টির। হাতবদল হয়েছে ২১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১টির। হাতবদল হয়েছে ৫৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
বস্ত্র খাতে ছিল মিশ্র প্রবণতা। ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ২৫টির। লেনদেন হয়েছে ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২২৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৮১ দশমিক ০৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২২ দশমিক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা।
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯৯ কোটি টাকা।