মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও নার্সিংবিষয়ক সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি, সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রিন্সিপালসহ সবার মতামত নিয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দ্রুত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার তারিখ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ১৩ তারিখ থেকে শুরুর প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এটা একদিন এদিক-সেদিক হতে পারে।’
তিনি জানান কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিএমডিসিসহ সবার মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে কিছু ক্লাস হলেও মেডিক্যাল শিক্ষায় সশরীরে ক্লাস নেয়া দরকার। নইলে গ্যাপ পড়ে যাবে। আমরা ডাক্তার পাব না। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সশরীরে ক্লাস নেয়া দরকার।’
ক্লাসে গেলে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান জাহিদ মালেক। বলেন, ‘মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও নার্সিংসহ সব ধরনের মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খুলবে। প্রথমে মেডিক্যালের প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বর্ষের ক্লাস শুরু হবে।’
কেন এমন সিদ্ধান্ত তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন জাহিদ মালেক। বলেন, ‘শুরুতে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। এখানে প্র্যাকটিক্যাল জড়িত আছে। কাজেই সেই ক্লাসগুলোকে আমরা আগে নেয়া শুরু করব। পরিস্থিতি আমরা দেখব। তারপরে সব ক্লাসই আমরা চালু করে দেব।’
মেডিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অবশ্যই রোগীর কাছে যেতে হয় জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বসেন, ‘এজন্য মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা প্রথমে ননকোভিড রোগীদের কাছে যাবে। পর্যায়ক্রমে কোভিড রোগীদের কাছেও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা যাবে। সবই হবে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’
এ ছাড়া, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সম্ভাব্যতা যাছাইয়ে আগামী রোববার আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বুধবার বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে তা পেছানো হয় বলে নিউজবাংলাকে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে নামলে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বার খুলে দেয়া হতে পারে।’
দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী বিশেষ করে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন মনোচিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
আর শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সব প্রস্তুতি তাদের আছে। করোনা পরিস্থিতি আর একটু নিয়ন্ত্রণে এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, ততই বাড়বে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।