বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আউশের ফলনে হতাশ কৃষক

  •    
  • ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:৪৫

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ী নওগাঁর উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে জানান, এবার আউশ ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কিছুদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রোদ কম হওয়ায় পাতার ক্লোরোফিল কম হয়েছে। এ জন্য কিছু এলাকার জমিগুলোতে কুশিবর্ধন ঠিকমতো হতে পারেনি। তাই ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁয় এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর কম জমিতে আউশের রোপণ হয়েছে। তার ওপর ফলনও নানা কারণে কম। এতে আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও পোকার আক্রমণ হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনও সময় আছে; ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭০ হাজার ৭৩৫ হেক্টর আউশ ধান রোপণের লক্ষ্য ছিল। তবে ধান রোপণ হয়েছে ৫৭ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। আউশ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টন। এরই মধ্যে জেলার ৫ হাজার ৮০ হেক্টর ধান কাটা শেষ হয়েছে।

জেলার বেশ কিছু ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, আউশ কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, ফলন তো কমই, তার ওপর স্থানীয় বাজারে গত বছরের চেয়ে ধানের দামও কম।

গত বছর জেলায় ৭১ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছিল। সে সময় বন্যায় কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ৬৯ হাজার ১৯৭ হেক্টর সুরক্ষিত ছিল, যা থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৫ টন ধান উৎপাদিত হয়।

এ বছর আউশ ধান রোপণের শুরুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ছিল। ফলে চারা থেকে বাড়তে পারেনি কুশি। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার মণ ধান কম উৎপাদিত হয়েছে আপৎকালীন এই ধান।

অনেকের জমিতে চারা রোপণের কিছুদিন পর রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ হয়েছে।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নওদুলি গ্রামের কৃষক আফাছ উদ্দিন বলেন, ‘হামি তিন বিঘা জমিত আউশ ধান রোপণ করুছনু (করেছিলাম)। রোপণের কিছুদিন পরে হঠাৎ কর‌্যা ধানের গাছগুলা লাল রং হয়া যাইয়া মরা (মারা) যাবার লাগে। তারপর আবার নতুন কর‌্যা জমিত ধান রোপণ করা লাগিছে (লেগেছে)।

‘এখন ধান কাটবার লাগিছি দুই বিঘা ধান কাটা ১২ মণের মতেআ ধান পাছি। এবার হামার লস হইয়া যাবে।’

রাণীনগর উপজেলার দেউলা গ্রামের কৃষক সুবির চন্দ্র জানান, ‘পাঁচ বিঘা জমিত আউশ ধান রোপণের পর এ্যানা (অল্প) বৃষ্টি হলেও আকাশোত মেলা দিন ধরা মেঘ ধরা আসলো (ছিল)। রোদ না হওয়ায় তখন ধানের চারার গোড়াত বৃষ্টির পানি জমা আসলো মেলাদিন ধরা। পানি শুকানের পর চারাগুলা ঠিকমতো কুশি ধরিছলো না। এল্লার (এগুলার) জন্নি (জন্য) ভালো ফলন হয়নি।’

কৃষকরা জানালেন, গত বছর স্থানীয় বাজারে প্রকারভেদে প্রতি মণ আউশ ধান ৯৫০ থেকে ১২০০ টাকায় কেনা-বেচা হয়েছিল। এবার প্রতি মণ আউশ ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে।

মান্দা উপজেলার দক্ষিণ মৈনম গ্রামের কৃষক তবির দেওয়ান বলেন, ‘বাজারোত প্রতি মণ ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টেকা (টাকা)। যেটি প্রতি বিঘাত ধান চাষ বাবদ খরচ সাড়ে ৬ হাজার টেকা। ধান পাচ্ছি বিঘাপ্রতি ৬ মণ করা। আর ছয় মণ ধানের দাম বর্তমানে চার হাজার ২০০ টেকার মতো। সে হিসাব করা বিঘাপ্রতি লোকসান হছে ২ হাজার থ্যাকা আড়াই হাজার টেকার মতন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ী নওগাঁর উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে জানান, এবার আউশ ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কিছুদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রোদ কম হওয়ায় পাতার ক্লোরোফিল কম হয়েছে। এ জন্য কিছু এলাকার জমিতে কুশিবর্ধন ঠিকমতো হতে পারেনি। তাই ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

তবে এ বছর জেলার কোথাও রোগবালাই অথবা পোকার আক্রমণ নেই বলে দাবি এই কর্মকর্তার। ব্রি-৪৮ সহ নতুন জাতের যেসব ধান রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।

তার পরও এ বছর আপৎকালীন ফসল আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশা করছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর