বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্থবছরের শুরুতে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে ‘মঙ্গল বার্তা’

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:৪৫

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বড় বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে শুরু হলো নতুন অর্থবছর। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ গুণ ঘাটতি দিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি নেই, বরং এটি অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৩ কোটি ৬০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার; যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ১৬ গুণ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

অর্থনীতির বিশ্লেষকরা আমদানি বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তারা বলেছেন, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হওয়া।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে।

শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে আমদানিতে উল্লম্ফনের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান ওই চূড়ায় উঠে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সে কারণে আমদানিতে যে মন্দাভাব ছিল, সেটা আর নেই। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।

‘পদ্মা সেতু, মেট্টোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ মহামারির মধ্যেও এগিয়ে চলছে। এ সব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে।’

এ সব কারণেই আমদানি খাতে খরচ প্রথমবারের মতো ৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানান জায়েদ বখত।

আরেক অর্থনীতিবিদ গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। কিন্তু মহামারির কঠিন এই সংকটের সময়ে কী হয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। আমদানি যেটা বাড়ছে, সেটা যদি বিনিয়োগে না আসে, তাহলে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামী বছরেই যানবাহন চলাচল করবে। মেট্টোরেলও পুরোদমে চলতে শুরু করবে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজও শেষ হবে। এই তিনটি বড় প্রকল্প বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

‘সে পরিস্থিতিতে ২০২৩ সাল থেকে ভিন্ন বাংলাদেশ পাবে দেশবাসী। আর এ সব উন্নয়ন যজ্ঞকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের ছক কষছেন উদ্যোক্তারা। সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই প্রয়োজনীয় পণ্য-সরঞ্জাম আমদানি করছেন। বাড়ছে আমদানি।

‘স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, আমাদের যথেষ্ট রিজার্ভ আছে। আমদানি বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

আমদানি-রপ্তানি বাড়ায় কমলাপুর কনটেইনার টার্মিনালে ব্যস্ততা বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪৭৫ কোটি ৭০ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩ ৪২ কোটি ১০ লাখ (৩.৪২ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। এ হিসাবেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে

জুলাই মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই এই ঘাটতি ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছে।

গত বছরের জুলাই মাসে এই উদ্বৃত্ত ছিল আরও বেশি ২১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়।

করোনার বছরে রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ এখন ৫০ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই। ফলে আমদানি ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশকে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

রেমিট্যান্স কমেছে

মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৮০ লাখ (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে এই সূচক।

কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে সেই জোয়ার আর নেই। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার আগস্ট মাসের রেমিট্যান্সের তথ্যও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য

জুলাই মাসে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে দ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল অনেক বেশি; ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছর শেষে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলার। আগের বছরের উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

আর্থিক হিসাবেও উদ্বৃত্ত

গত অর্থবছরের জুলাই মাসে আর্থিক হিসাবে ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। তবে অর্থবছর শেষ হয়েছিল ১ হাজার ৩০৮ কোটি ডলারের বিশাল উদ্বৃত্ত নিয়ে।

এবার ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছর।

এ বিভাগের আরো খবর