‘আমার বাবায় না নদীতে মাছ ধরে। আমাগো বাড়ি নদীতে গেলে আমরা কোথায় থাকুম। আর স্কুলে পড়ুম কেমনে।’
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কালীগঙ্গা নদীতে বালু তোলা বন্ধের দাবিতে বুধবার দুপুর ৩টার দিকে মানববন্ধনে এই কথাগুলো বলে ওই বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র বিশ্বজিত রাজবংশী।
উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বেওথা এলাকার কালীগঙ্গা নদীর বালু মহলের ইজারা পেয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য শামিম করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী শামিম হোসেন এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আফসার অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আফসার উদ্দিন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালিগঙ্গা নদীতে বর্ষার পানি আসার পর থেকে ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে জয়নগর, বাহিরখোলা ও আন্দারমানিক এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এর ফলে এসব এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জয়নগর এলাকার হাসিনা বেগম বলেন, ‘খালি কয় আপনারা ডিসি অফিসে যান। ডিসি অফিসে তো একশবার যায়্যা হারছি। কিন্তু কোনো উপকার পাই নাই। সরকারের কাছে তাই সরাসরি জানাইবার জন্যে আজক্যা আমরা গ্যারামের সবাই এক অইছি। কেউ তো আইগায়্যা আইলো না, ড্রেজার সরাইলোনা।’
একই এলাকার আলপনা আক্তার বলেন, ‘এহন (দুপুর) পোলাপান নিয়্যা বাড়িতে থাকার কথা। কিন্তু বাড়ি ঘর বাঁচাইতে এহন আমাগো রাস্তায় দাঁড়াইতে হইছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে আইস্যা পরছে। এইভাবে বালি কাটতে থাকলে বেশি দিন বাড়িঘরে থাকতে পারুমনা। রাস্তায় থাকতে হইবো।’
আন্ধারমানিক এলাকার তাহমিনা বেগম বলেন, ‘ফজরের নামাজের আগে থেইক্যা বালি কাটা শুরু হয়। রাইত ৯-১০টা পর্যন্ত ড্রেজার মেশিন চলে। এর আগে এলাকার সবাই লাঠি-শলা নিয়্যা গেছিলাম। তহন বিকালবেলা বালি তোলা কাটা বন্ধ ছিল। পরের দিন সকালে দেহি আবার কাটতেছে। ড্রেজার আলাগো বালি কাটতে মানা করলে তারা কয় আমরা তো কামলা দেই। আমাগো দিয়্যা কাটায়।’
একই এলাকার কমলা বেগম বলেন, ‘কয়েকবছর ধইরা বালি কাটতেছে। কেউ বাধা দিলে তারে ভয়ভীতি দেখায়। আমাগো জাগা অনেক খানি নাইম্যা (নদীতে) গেছে। এহন যদি ভিটা (বসতঘর) নাইম্যা যায়, তাইলে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়্যা কীভাবে থাকব। আমাগো আর জাগা নাই, বাড়িটাই সম্বল।’
জয়নগরের আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘ড্রেজিং দিয়ে অবৈধভাবে বালি তোলার কারণে অনেক জমিজমা ও ফসলি জমি নদীতে চইলা গেছে। এখন অনেক ফসলি জমি, বসতভিটা, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল ও খেলার মাঠ ভাঙনের হুমকিতে আছে। বালি তোলা বন্ধ না করলে এসব রক্ষা করা যাবে না।’
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জয়নগর, বাহিরখোলা, আন্ধারমানিক ও পৌলী এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে জয়নগর, বাহিরখোলা, আন্দারমানিক ও পৌলী এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ অংশ নেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়েছে। যদি ইজারার শর্তের বাইরে পরে তবে একটি বোর্ড বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’