চট্টগ্রামে আপাতত নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়াতে পারে এমন ঝুঁকি নেই বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
২০২০ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০০ জন করোনা রোগীর নমুনার স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিং ও মিউটেশন বিশ্লেষণ এমন দাবি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) সহকারী পরিচালক (গণযোগাযোগ) খলিলুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীনের উহানে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটি বেশ কয়েকবার রূপ পরিবর্তন করেছে। বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণের উচ্চগতি দেখা গেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও ভাইরাসটির আলফা, বিটা, ডেল্টা সংস্করণ পাওয়া গেছে।
স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে এসব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও মৃত্যু হারের ভিন্নতা দেখা যায়। এমন কি নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির আশঙ্কা থাকে।
সিভাসুর একদল গবেষক উল্লেখযোগ্য মিউটেশন ও উচ্চ সংক্রমণ করতে পারে সম্ভাব্য এমন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করতে গবেষণা করেন। এ জন্য ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্সের মিউটেশন কাজ করে ঢাকাস্থ ডিএনএ সলিউশন লিমিটেড।
গবেষক দলের সদস্য ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গবেষণায় ২০২০ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০০ জন করোনা রোগীর নমুনার স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিং ও এদের মিউটেশন বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৭টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে নিউক্লিওটাইডের সিঙ্গেল মিউটেশন হয়েছে ৪৩টি নমুনায় ও একের অধিক নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন হয়েছে ২৪টি নমুনায়।’
এসব মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ৪৯টি বিভিন্ন স্থানে এমাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন হয়েছে। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সে স্পাইক প্রোটিনের গঠনের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। এসব মিউটেশনের স্থান ছিল স্পাইক প্রোটিনের এস১ ডোমেইন এবং এস১-এস২ সাব-ইউনিট লিংকার।
গবেষণায় দেখা যায়, এমাইনো অ্যাসিডডের মিউটেশনের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হচ্ছে, D614G, D138H, V213L এবং Q506H।
এসব বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দাবি করেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুনভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম এমন কোনো করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নেই।
বিভিন্ন জিনের বায়োলজিক্যাল মডেলিং করে করোনাভাইরাসের মিউটেশন সম্পর্কে আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যেতে পারে বলে জানান ওই গবেষক।
সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ডা. ত্রিদীপ দাশ, মলিকুলার বায়োলজিস্ট ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. সিরাজুল ইসলাম এবং ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।
গবেষক দলের আরেক সদস্য ডা. ত্রিদীপ দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী বলি, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ও মানবদেহের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের (এসিই-২) সংযোগস্থলগুলোতে শনাক্তের মাধ্যমে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ডিজাইন করতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া ভাইরাসের প্রোটিনের নির্দিষ্ট এপিটোপ শনাক্তকরণের মাধ্যমে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ক্রমাগত পরিবর্তন ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের কার্যকারিতায় ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। তাই গবেষকরা মনে করেন, নিয়মিত স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ উৎপাদন করা সম্ভব-যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে জানার ওই গবেষক।
ত্রিদীপ দাশ জানান, গবেষণার তিনটা উল্লেখযোগ্য ফলাফলের কথা বলা যায়। এগুলো হলো, নিউক্লিক অ্যাসিডের মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের গঠনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরির্তন হয়নি। স্পাইক প্রোটিনের এ ধরণের মিউটেশন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনাভাইরাসের নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি দেখা যায়নি।