করোনা মহামারির মধ্যে ইতিবাচক ধারায় চলছে দেশের রাজস্ব খাত। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাইয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি। গত বছর এই সময়ে রাজস্ব আয় বাড়েনি বরং প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক তথা ঋণাত্মক হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, জুলাইয়ে লকডাউনের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির থাকায় এর প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে তথা রাজস্ব আয়ে। তা না হলে জুলাই মাসে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হতো।
তাদের মতে, লকডাউন উঠে যাওয়ায় এখন ব্যবসা–বাণিজ্যে গতি ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে আগামীতে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।
এনবিআরের হালনাগাদ সাময়িক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক শুন্য ৬ শতাংশ।
যেখানে গত বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্নক তথা মাইনাস ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।
অবশ্য, গত অর্থবছরের তুলনায় চার শতাংশের বেশি আদায় বাড়লেও আলোচ্য জুলাই মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বছরের শুরুতে রাজস্ব আদায় কম হয়ে থাকে। উপরোন্ত কারোনার ধাক্কা লেগেছে। যে কারণে সাধারনত এই সময়ে ঘাটতি বেশি থাকে।
এবারের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক এই তিন উৎস থেকে তা আদায় করা হবে।
যদিও অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উচ্চাভিলাষী এই লক্ষ্যমাত্রা কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়।
যোগাযোগ করা হলে গবেষণা সংস্থা পিআরআই ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের অর্থনীতির যে আকার তার সঙ্গে রাজস্ব আদায় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার না করতে পারলে কাঙ্খিত আয়কর আদায় সম্ভব নয়।
রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে আয়কর আদায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এই সময়ে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এই সময়ে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের অন্যতম উৎস মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এই সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় ছিল পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় আদায় বেড়েছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
তবে জুলাইয়ে আমদানি শুল্ক কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। এ মাসে আমদানি পর্যায়ে আদায় হয়েছে চার হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আদায় হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
জুলাই মাসে আমদানি পর্যায়ে ঋণাত্নক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পরিমাণ ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অর্থবছরের শুরুতে এলসি খোলা কমে যাওয়ায় আমদানি কম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি শুল্কে।
করোনার মধ্যে ও গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট আদায় হয় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছরের তুলনায় আদায় বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ।
এনবিআরের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় চলতে থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে ৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।