পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ফাস ফাইনান্সের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কেউ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন এমন নয়। কিন্তু দুই মাস ধরেই তাদের মালিকানা শূন্য দেখাচ্ছে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে। এই বিষয়টি কীভাবে হলো, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলছেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদেরকে ধারণ করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২০১০ সালের মহাধসের পরেই এই নির্দেশ দেয়া হয়, কিন্তু এক দশকেও তা প্রতিপালন হয়নি। উল্টো ঘোষণা না দিয়ে বহু মালিক-পরিচালক শেয়ার বিক্রি করে আইন লঙ্ঘন করেছেন।
এরই মধ্যে বন্ধ, লোকসানি, ডুবন্ত আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের পর্যাপ্ত শেয়ার নেই, এমন বেশ কিছু কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে আছে ফাস ফাইনান্সও।
গত ৩১ মে কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়। আর জুন ও জুলাই মাস শেষে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার শূন্য দেখাচ্ছে।
জুন শেষে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩২.২৮ শতাংশ শেয়ার দেখানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। মে মাস শেষে তা ছিল ১২.১৪ শতাংশ। ওই মাস শেষে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ছিল ১৩.২ শতাংশ।
জুন ও জুলাই মাস শেষে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার শূন্য দেখানো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। অর্থাৎ ১ কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার শেয়ার ছিল তাদের হাতে।
এই পরিমাণ শেয়ার হঠাৎ উধাও হয়ে গেল কীভাবে?
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উঠা এই প্রশ্নের জবাব জানতে কোম্পানির সচিব জাহিদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের কোনো উদ্যোক্তা-পরিচালক নেই। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পর পরেই তাদের কাছে যে পরিমাণ শেয়ার ছিল তা ব্লক করে দেয়া হয়েছে এবং তা প্রাতিষ্ঠানিকদের হিসেবে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্লক করা হলেও শেয়ারগুলোকে তো আলাদা করে রাখার সুযোগ নেই। তাই শেয়ারগুলো প্রাতিষ্ঠানিকের অংশে দেখা হয়েছে। তবে তা বিক্রি অনুপযোগী। এতে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’
এই শেয়ার দিয়ে পরে কী করা হবে-জানতে চাইলে জাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘যখন আবার কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা মনোনীত হয়ে আসবেন, তখন শেয়ারগুলো তাদের কোটায় প্রদর্শন করা হবে।’
পি কে হালদারকাণ্ডে ডুবেছে কোম্পানি
আলোচিত ব্যাংকার পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জামানত ছাড়াই ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষা বলছে, ফাস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৭৩ শথাংশ বা ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পি কে হালদারের বেনামি ৯ কোম্পানির নামে ঋণের ৫৮ শতাংশ বা ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে, যা আদায় সম্ভব নয় বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর ডুবে যাওয়া কোম্পানিটিকে টেনে তুলতে মে মাসের একেবারে শেষ দিন পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে বিএসইসি। এর পরেই আগের পরিচালকদের শেয়ার ব্লক করা হয়।
বিপুল পরিমাণ খেপাপি ঋণে জর্জরিত কোম্পানিটি ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১০ টাকা ১২ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮ টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থবছর শেষ হয়ে আট মাস পেরিয়ে গেলেও ২০২০ সালের আর্থিক হিসাব বিবরণী এখনও তৈরি হয়নি।
নতুন পর্ষদে যারা
এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.সাইফুদ্দিন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মো. আলী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. সেলিম। এছাড়া দুজন মনোনীত পরিচালক রয়েছে।