জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরসহ সব ধরনের নকশাবহির্ভূত স্থাপনা উচ্ছেদের অগ্রগতি কতটুকু তা জানা নেই বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ ভবনকে পৃথিবীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সংসদ ভবন আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নকশাবহির্ভূত যে স্থাপনা আছে, জিয়াউর রহমানের তথাকথিত কবরের কথা শুধু আমি বলিনি। আরও কিছু কবর আছে অবৈধভাবে দিয়েছে, জিয়াউর রহমানেরটা জায়েজ করার জন্য দিছে কিনা জানি না। যত অবৈধ স্থাপনা আছে সবগুলো অপসারণ করার জন্য বলেছি। আমি একটা কিন্তু বলিনি।’
সেই প্রস্তাবনাটি কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।’
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাকে সমাহিত করা হয় সেখানেই। পরে সেখান থেকে সরিয়ে জিয়ার দেহাবশেষ চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয় বিএনপি থেকে। দেহাবশেষ কফিনে করে আনা হয়েছিল, কিন্তু কফিনের মুখ তখন খোলা হয়নি।
সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার মরদেহ আছে কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দাবি এখানে জিয়ার মরদেহ নেই; আর বিএনপির দাবি মরদেহ রয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, চন্দ্রিমায় জিয়াউর রহমানের কোনো মরদেহ নেই। এটা বিএনপিও জানে।
খোদ এরশাদের কাছ থেকেই এ তথ্য শোনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা তাদের (স্বামী ও) বাবার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। তারা কি দেখেছে কখনও বা কেউ কি কোনো ছবি দেখেছে কখনও? দেখেনি। কারণ ওখানে কোনো লাশ ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রীর সুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যে কথাটা বলেছি যে তার লাশ তারা পায়নি। যারা হত্যা করেছিল, তারা তার লাশ গুম করেছিল। বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, সেই লাশ পাওয়া গিয়েছে। তো ছবি দেখান।’
জিয়াউর রহমানকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির একটা বিশাল টিম থাকে, তার সব কর্মকাণ্ড ধারণ করা হয় সবসময়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে যে সব ছবি তোলা হয় তা না, ২০০ বছর আগেও যদি দেখেন সেগুলো ধারণ করা থাকে।
‘কারণ রাষ্ট্রপতি যেহেতু ছিলেন। যদু মধু রাম সাম তো আর নয়। তার তো একটা ডেডবডির ছবি থাকবে। বিএনপির মহাসচিব আরও বলেছেন তার পোস্ট মর্টেম হয়েছে। পোস্ট মর্টেম হলে কোন হাসপাতালে হয়েছে। পোস্ট মর্টেম কে করেছেন? ডা. তোফায়েলের নাম নিয়েছেন। কিন্তু কোন হাসপাতালে করেছে?
‘পোস্ট মর্টেম হয়, প্রতিটি হাসপাতালে একটা ফরম্যাট আছে। যেসব হাসপাতাল পোস্ট মর্টেম করে সেখানে এই ফরম্যাট থাকবে। যদি থাকে সেটা প্রকাশ করেন।’
জিয়াউর রহমানের কফিন বক্সটা কাঁচ দিয়ে ঢাকা ছিল দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমি সচক্ষে দেখেছি জিয়াউর রহমানের লাশ। চোখ দিয়ে দেখতে পারলেন, ছবি তুলতে পারলেন না। উনার কাছে ক্যামেরা ছিল না, মানুষে ছবি তুলবে। ছবি তোলার লোক আছে তো।’
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিন্দা করি। কোনো হত্যাকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না।’
তবে মরদেহ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটি ব্যক্তি জিয়ার সঙ্গে কোনো বিরোধ নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাসের মিথ্যাচার নিয়ে বলছি। তার যদি লাশ না থাকে সেটাকে কবর বানিয়ে যদি সম্মান দেখানো হয়, এটা ইতিহাসের বিকৃতি। আমরা ইতিহাসের বিকৃতি বন্ধ করতে বলছি।’