বদলি সাজা খাটা নিয়ন্ত্রণে দেশের কারাগারগুলোতে আসামি শনাক্তে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা দরকার বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বদলি জেল খেটে মুক্তির পর গাড়িচাপায় মারা যাওয়া মিনু আক্তারের বিষয়টিও তুলে ধরে আদালত।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার বদলি সাজা খাটাসংক্রান্ত এক রুলের শুনানি হয়। এ সময় মিনুর বিষয়টি তুলে ধরে আদালত বলে, ‘আর কোনো মিনু এভাবে যেন প্রক্সিতে (বদলি) না পড়ে।’
এদিন মিনুর মৃত্যুসংক্রান্ত মামলা এবং তার বদলি সাজা খাটানোসংক্রান্ত মামলার নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তা ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির হন।
চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয় কুলসুম আক্তার কুলসুমী নামে এক নারীকে। কুলসুমী আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তার নামে মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নজরে এনে উচ্চ আদালতে আবেদনের পর গত ৭ জুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে আদালত রুল জারি করে।
রুলে দেশের সব জেলখানায় কয়েদিদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চায় হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এর মধ্যে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। তবে গত ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মিনু। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়।
আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন।
পরবর্তী তারিখে আদালত নথিসহ মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে। সে অনুযায়ী তারা বুধবার ভার্চুয়ালি হাজির হন। এ সময় যুক্ত ছিলেন আইনজীবীরা।
এ সময় তদন্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আদালত বলে, ‘কেন সে (মিনু) রাত ৩টায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেল। তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অথবা শুধুই আটকরাই প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কি না, নাকি অন্য কেউ আছে- এসব বিষয় সিরিয়াসলি তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নেবেন।’
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আইনজীবীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আরিফুর রহমান।